বিএনএ, চট্টগ্রাম: মো. রিয়াদ বিন সেলিম উদ্দীন, পেশায় মূলত একজন গাড়ি চালক। তবে তিনি কখনো র্যাব, কখনো সেনাবাহিনী, আবার কখনো ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা, লেকচারার, এসআলম গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে করতো প্রতারণা ও মাদক ব্যবসা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। তার সমস্ত পরিশ্রম জলে গিয়ে অবশেষে ধরা পড়ে যায় র্যাবের হাতে।
শুক্রবার (১০ মার্চ) রাত সাড়ে ১২টায় নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন হাজীর পোল এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার।
গ্রেপ্তার রিয়াদ বিন সেলিম (২৪) পটিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাইকপাড়া এলাকার মো. সেলিম উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নগরের চকবাজার থানায় নারী-নির্যাতনের মামলা আছে।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার রিয়াদের প্রধান কাজই ছিলো সরকারি কর্মকর্তা বা শীর্ষ কোন কোম্পানির কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পরিচয়ে প্রতারণা করা। তিনি পেশায় মূলত একজন গাড়িচালক। তবে ডিবি পুলিশে কর্মরত এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক হিসেবে চাকরি করার সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাজ করে দেওয়ার উদ্দেশে অর্থগ্রহণ শুরু করে এবং একপর্যায়ে এটিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন।
র্যাব আরও জানায়, সেই সুবাধে বিভিন্ন থানা বা সংস্থায় যাওয়ার সুযোগে প্রতারণামূলক কথা বলা ও প্রভাব দেখানো তার জন্য সহজ হয়ে যায়। তিনি প্রাথমিকভাবে ডিবি অফিসার পরিচয়ে প্রতারণা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীতে যোগদানের শখ ছিল তার। সেই শখ পূরণ করতে ২০১৯ সালে তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদবীর ভুয়া একটি পরিচয়পত্র বানায় এবং সেই পরিচয়পত্র দিয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের আওতাধীন বিভিন্ন ঠিকাদার এর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা লাভের চেষ্টা করতেন। পাশাপাশি তিনি কখনো ইঞ্জিনিয়ার, কখনো ইস্ট-ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয় (চট্টগ্রাম) এর লেকচারার, কখনো তিনি বনে যান এস আলম গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তা, আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সেজে সাংবাদিকদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের সুবিধা দেওয়ার কথা বলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করতেন।
‘সবশেষে র্যাবের কর্মকর্তা সেজে ০১৭৭৭ (র্যাবের সরকারি নম্বর) সিরিজের একটি সিম সংগ্রহ করেন এবং তার এ মোবাইল নাম্বারের সাথে র্যাব ফোর্সেস এর মনোগ্রাম যুক্ত করেন। পাশাপাশি এ নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ ও কন্টাক্টে AD Operations, RAB H/Q লিখে তা সেইভ করেন। পরে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওয়ারেন্ট ও মামলার কথা বলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি ব্যক্তিবর্গকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারে চট্টগ্রামের র্যাব কর্মকর্তার পরিচয়ে বিভিন্ন প্রতাররণার চেষ্টা করেন।’
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার বলেন, রিয়াদ নিজেকে বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করতো। অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করি। তার ব্যবহার করা জিনিসপত্র পরীক্ষা করলে সেনাবাহিনীর ক্যামোফ্লাজ রঙয়ের একটি ব্যাগের মধ্যে থেকে ইয়াবা ট্যাবলেটও উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য ব্যাগ হতে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নকল পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে র্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পণ্য অর্ডার করে তা বিনামূল্যে পাওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি বিবাহিত ও সন্তানের জনক হওয়া স্বত্তেও ১ম স্ত্রীর অগোচরে ২য় বিয়ে করেন। তিনি চারিত্রিকভাবে অস্থিতিশীল। তার বিরুদ্ধে নগরের চকবাজার থানায় নারী-নির্যাতনের মামলা আছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে তাকে চান্দগাঁও থানায় হস্তান্তর করা।
বিএনএ/এমএফ