বিএনএ ডেস্ক :পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এখন মোট আসন ৩৩৬। কিন্তু তার মধ্যে সরাসরি ভোট হওয়ার কথা ছিল ২৬৬টি আসনে। কিন্তু এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ২৬৫টি আসনে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে ১টি আসনের ফলাফল স্থগিত করা হয়। বাকি ৭০টি আসন মহিলা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। মহিলাদের জন্য ৬০ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ১০টি আসন। পাক সংবিধান অনুযায়ী সরাসরি ভোটে যে দল যত সংখ্যক আসনে জয় পাবে, সেই অনুপাতে ওই সংরক্ষিত আসনগুলিতে প্রতিনিধি ঠিক করবে দলগুলি।

যদিও এই সংরক্ষিত আসনগুলির উপর সরকার গঠন নির্ভর করে না। সেই হিসাব হবে সংরক্ষিত বাদ দিয়ে ২৬৪টি আসনের মধ্যে। সেই অর্থে বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৩৩ জন জয়ীর সমর্থন পেলেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদুসংখ্যা’ ছোঁয়া সম্ভব হবে।
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)র ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ২৬৪টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছে ১০১টি আসনে যাদের বেশিরভাগই ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত। পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) যথাক্রমে ৭৫টি এবং ৫৪টি আসনে জয় পেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এছাড়া মুত্তাহিদা ক্বওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) জিতেছে ১৭টি আসন।
অন্যান্য দলের মধ্যে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল) ৩টি, জামিয়াত উলামা-ই-ইসলাম পাকিস্তান (জেইউআই-পি) ৪টি, ইশতেহ্কাম-ই-পাকিস্তান (আইপিপি) ও বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) ২টি করে, মজলিশ ওয়াহ্দাত-ই-মুসলিমীন পাকিস্তান (এমডব্লিওএমপি), পাকিস্তান মুসলিম লীগ- জিয়া (পিএমএল-জেড), পাখতুনখোয়া ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পাকিস্তান (পিএনএপিপি), বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি), ন্যাশনাল পার্টি (এনপি) ও পাখতুনখোয়া মিলি আওয়ামী পার্টি (পিএমএপি) একটি করে আসনে জয়ী হয়েছে।
অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠতার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে জোট। এ ছাড়া স্বতন্ত্র এবং জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের মতো কট্টরপন্থী কয়েকটি দলের সমর্থনও তারা পেতে পারে। পাক নির্বাচন কমিশন ‘রাজনৈতিক দল’ হিসাবে পিটিআই-এর স্বীকৃতি বাতিল করায় তারা সরাসরি ভোটের ময়দানে নেই। কিন্তু ইমরানের দলের অনেক নেতাই ‘স্বতন্ত্র’ হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ফল বলছে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে নির্দলেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তা ছাড়া, খাইবার-পাখতুনখোয়ার আওয়ামি ন্যাশনাল পার্টি, সিন্ধের মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট এবং কয়েকটি বালুচ সংগঠনের সমর্থনও ইমরানের অনুগামীদের দিকে থাকতে পারে।
তার আগেই হাত মেলানোর কথা ঘোষণা করল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির জোট গড়ায় পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাবেন তাঁরা।
বিলওয়ালের বাবা তথা প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং শরিফ শুক্রবার রাতে ভোটগণনার প্রবণতার আঁচ মেলার পরেই বৈঠকে বসেছিলেন। ১০ই ফেব্রুয়ারি দুপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে দু’দল ভোট-পরবর্তী জোটের ঘোষণা করেছে।
একদা প্রবল প্রতিপক্ষ পিএমএলএন এবং পিপিপি অবশ্য বছর দু’য়েক আগেই কাছাকাছি এসেছিল। ২০২২ সালে এপ্রিলে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ইমরান সরকারের পতনের পরে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নওয়াজের ভাই শাহবাজ। বিলওয়াল ভুট্টো ছিলেন সেই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে।
এদিকে, দু’টি ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জেলবন্দি ইমরান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ‘বিজয়ভাষণ’ও দেন। তিনি বলেন, ‘‘নওয়াজ শরিফের ‘লন্ডন পরিকল্পনা’ ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বকাপ জয়ী প্রাক্তন পাক ক্রিকেট অধিনায়ক সরাসরি কিছু না বললেও তাঁর দলের অভিযোগ, শেষ বেলায় পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে শরিফ-সমর্থক পাক সেনা বেশ কিছু আসনে ভোটে ফল বদলে দিয়েছে । তবুও ইমরান খান এগিয়ে আছে।
শেষ পর্যন্ত ইমরানকে ঠেকাতে পাক সেনা শরিফ-ভুট্টো জোট সেঞ্চুরিয়ান ইমরান খানকে নো বলে আউট করার চেষ্টা করছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
বিএনএ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী