20.7 C
আবহাওয়া
৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সড়ক হত্যা দিবস আজ

সড়ক হত্যা দিবস আজ

সড়ক হত্যা দিবস আজ

বিএনএ, ঢাকা: বাংলাদেশে এখন প্রথম ও প্রধান সমস্যা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। মূলত শব্দটা সড়ক ‘দুর্ঘটনা নয়’ বরং ‘সড়কে হত্যা’ বলা উচিত। আর তাই ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ পালন করা হয় সড়ক হত্যা দিবস। ঘাতকমুক্ত সড়ক মনেপ্রাণে ধারণ এবং খুনি ঘাতক হায়নাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াঁতে হবে ওদেরকে থামাতে হবে, তাদের পরবর্তী টার্গেট আপনি বা আপনার আপনজনও হতে পারে!

প্রতিদিন সড়কে শত শত মানুষ মারা গেলেও এর সঠিক সংখ্যা কেউ বলতে পারে না। তবে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সড়কে প্রতিদিন ৬৪ জনকে ‘হত্যা’ করা হয়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ৬ হাজার ২৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ হাজার ৩৭২ জন।

এর মধ্যে ৬৪৭ নারী, ৪৬৬ শিশু, ৪১৬ শিক্ষার্থী, ৮১ শিক্ষক, ১ হাজার ৫২৬ চালক, ২৬০ পরিবহন শ্রমিক, ৮ প্রকৌশলী, ৭ আইনজীবী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৭৭ নেতাকর্মী, ২২ চিকিৎসক, ১৩ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ১৫ সাংবাদিক আছেন।

২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭৩ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ সেনা, ৪০ পুলিশ, এক র‌্যাব, বিজিবির ৭, নৌবাহিনীর ৩, আনসারের ৩, ফায়ার সার্ভিসের ২ এবং এনএসআইর এক সদস্য রয়েছেন।

শিক্ষার্থী আবরারকে জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর ‘হত্যা’ করা হয়। রমিজুদ্দিন শিক্ষার্থী দীয়া করিমকে ‘হত্যা’ করা হয় ফুটপাতের ওপর। সাভারের শিল্পীকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়, কিছুদিন আগে ঢাকার উত্তরায় ভাড়া নিয়ে তর্কের কারণে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে চাকায় পিষে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। তবে এসব ‘হত্যা’র কোনো বিচার হয়নি।

মেধাবী শিক্ষার্থী আদনান তাসিন সেন্ট যোসেফ কলেজের ইংলিশ ভার্সন সায়েন্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে বিমান বন্দর সড়কে শেওড়া বাস স্ট্যান্ডে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হবার সময়ে দূরপাল্লার একটি বাস তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। তবে এ ‘হত্যা’র আজ পর্যন্ত কোনো বিচার পায়নি তাসিনের পরিবার।

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন সুমাইয়া আক্তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ ১১মাস চিকিৎসা নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। না ফেরার দেশে চলে গেছেন সুমাইয়া। ভর্তির পর একদিনও ক্লাস করা হয়নি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওই ছাত্রীর। ২২ নভেম্বর রাতে সুমাইয়া সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বরের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে সড়কে পিষ্ট হয়েছেন ৩ শিক্ষার্থী। নরসিংদীর শিবপুরে বাস-প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ৩ শিক্ষার্থী। এ সময় প্রাণ গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাদিয়ার স্বামীরও। গত ১৬ আগস্ট রাতে শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ঢাকার মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির এমবিএর শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার, জান্নাত, আকিব ও নিহত সাদিয়ার স্বামী ইকরাম মিয়া।

নরসিংদী দমকল বাহিনীর উপ-সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির ওই শিক্ষার্থীরা মাজার জিয়ারত শেষে প্রাইভেট কারযোগে সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। প্রাইভেট কারটি শিবপুরের কারার চর এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে ঢাকা আসা সিলেটগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাসটি খাদে পড়ে যায় এবং প্রাইভেট কারটি দুমড়ে মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেট কারে থাকা ৩ যাত্রী নিহত হন।

গেল বছরের ১১ জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কাছে একটি দ্রুতগামী ট্রাকের চাপায় পড়ে গুরুতর আহত হন আকিব রেজা। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।

‘ঘুরে আসছি মা’ বলে লাশ হয়ে ফিরলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট বয় মো. তাওহীদুল ইসলাম। বাবা-মায়ের আদরের এ সন্তানটি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। একটি দুর্ঘটনা সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। মায়ের কাছে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে আসার কথা বলে তিনি ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি মায়ের কোলে ফিরে এসেছেন, তবে লাশ হয়ে। ছেলেকে হারিয়ে এখন বাবা-মা পাগলপ্রায়।

সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। থেমে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় আগামীর স্বপ্ন। বাবা-মায়ের কোলে ফিরছে না সন্তান। স্বজনদের আহাজারি; যেন দেখার কেউ নেই। সড়কে হত্যার বিচারতো পরিবারগুলো পাচ্ছেই না, উপরন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পাওয়াটাও হয়ে ওঠে না। আবার অনেক মানুষতো জানেই না সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়।

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ক্ষতিপূরণ পাওয়া যেমন জটিল, তেমনি সময়সাপেক্ষ। যে কারণে ২০১৮ সালে চালু হওয়া বিধি গত বছর গেজেট হিসেবে প্রকাশের পর সুবিধাভোগীর সংখ্যা এখন অবধি ২০০ পার হয়নি। দুর্ঘটনার এক মাসের মধ্যে আবেদনের বাধ্যবাধকতার কারণে অনেকে সুযোগবঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

আসিফের স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! বাবার পেশাই কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে তাকে। মা আর বোনের সংসারে বাবাই ছিলেন মূল অবলম্বন। গত বছরের মাঝামাঝি রাস্তা পার হওয়ার সময় মিরপুরে বাসের ধাক্কায় মারা যান বাবা। সেই থেকে কাপড় বুনে চলছে মা আর বোনকে নিয়ে আসিফের সংসার।

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেয়- এ বিষয়টি জানা ছিল আসিফের। কিন্তু বাবার মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবারকে সামলে উঠতেই পেরিয়ে যায় এক মাস। নিয়মানুযায়ী দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যেই ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে হয়। তা করতে না পারায় ক্ষতিপূরণও জোটেনি আসিফের পরিবারের ভাগ্যে।

আসিফ তবুও ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটি জানতেন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেশের বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। যারাও-বা জানেন তারা কতটুকু সুবিধা নিতে পারছেন সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করার সময়সীমা যথেষ্ট নয়। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, তাকে তো আবেদন করার সুযোগটা দিতে হবে। যদি সুযোগই না পায়, তাহলে তো লঙ্ঘনের কোনো শেষ নেই। সুতরাং এ জন্য অবশ্যই সময় বাড়ানো প্রয়োজন এবং দায়িত্ব বিআরটিএকে নিতে হবে।

আর বিষয়টি প্রচার হয়নি বিধায় অনেকে এ সম্পর্কে জানে না বলেও মনে করছেন ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তাই সময় বাড়িয়ে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন উপায়ে বেশি বেশি প্রচারের পরামর্শ দেন তিনি।

রোডসেফটি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান এমএস সাদিকুল মনে করছেন, ‘একটি ট্রাস্ট করতে পারলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর তারা সব ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, ‘কেউ মারা গেলে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে। তখন কেইবা আবেদন করবে, কেইবা তদবির করবে, আর কেইবা টাকা তুলবে। তারা তো শোক কাটাইতে ব্যস্ত। একটা ট্রাস্ট করতে হবে। তাদের কাজ হবে যেখানেই দুর্ঘটনা ঘটুক। তাকে চিহ্নিত করে টাকাটা পৌঁছে দেয়া।’

অবশ্য বিআরটিএ এ সময়কেই যথেষ্ট মনে করছে। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলছেন, সময় বেশি দিলে ভুয়া আবেদন করার সুযোগ বাড়তে পারে। তখন একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘বিআরটিএর এত জনবল নেই যে, ঘরে ঘরে গিয়ে সব তথ্য নিয়ে এসে টাকা পৌঁছে দেবে। এখানে অনুসন্ধান করতে হবে। যদিও আমাদের কমিটি আছে; কিন্তু জনবল অনেক কম। প্রতিদিন এত দুর্ঘটনা হয় যে, এ জনবল দিয়ে চার ভাগের এক ভাগ কাজও সামাল দেয়া সম্ভব না।’
আইন কার্যকরের পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করেছেন ১ হাজার ৩ জন। যাদের মধ্যে ১৯৪ জনকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা।

বিএনএনিউজ/ রেহানা/ বিএম/ হাসনা

Loading


শিরোনাম বিএনএ