বিএনএ, ঢাকা: আজ ১১ জানুয়ারি। বাংলাদেশে দিনটি ওয়ান-ইলেভেন নামে পরিচিত। বহুল আলোচিত সেই ওয়ান ইলেভেনের ১৫তম বছর আজ। ২০০৭ সালের এই দিনে বেসামরিক মোড়কে সামরিক সরকারের আবির্ভাব। দেশে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। দেশি-বিদেশি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আগত সেই ঘটনা পরবর্তীতে কলঙ্কিত ওয়ান ইলেভেন নামে পরিচিতি পায়।
২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে তার নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। কিন্তু শুরু থেকেই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগের আপত্তির কারণে নানা বিতর্ক শুরু হয়।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকলে সরকারের উপদেষ্টারা একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন। এরই মধ্যে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। একপর্যায়ে সেনাসমর্থনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ।
এর আগে বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে না মানা এবং নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবিতে আওয়ামী লীগের আন্দোলনে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। একপর্যায়ে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ নিহত হন।
এভাবে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় একপর্যায়ে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। তখন সেনা প্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (পরে জেনারেল) মইন উ আহমদ। জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে তিনি সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। পরবর্তীতে এই সরকারের নাম হয় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তিনিই এক অনুষ্ঠানে ১১ জানুয়ারির জরুরি অবস্থা জারির দিনটিকে ওয়ান-ইলেভেন বা এক-এগারো নামে আখ্যায়িত করেন।
ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার প্রায় ২ বছর পর দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে জনমনে তখন আশার সঞ্চার হয়েছিল, দেশের রাজনীতিতে হয়তো গুণগত পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। উল্টো দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরস্পরের প্রতি একটা ‘অসহনীয় অবস্থান’ তৈরি হলো।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর গত প্রায় এক যুগ ধরে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ সরকার। ইতোমধ্যে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছে। দলীয় সরকারের অধীনে শেষ দুটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অপরদিকে গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বিএনপিসহ দেশের অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গত ১৫ বছর ধরেই ১১ জানুয়ারি দিনটিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি।
বিএনএ/এমএফ