বিএনএ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : মিরসরাইয়ে অর্ধডজন মামলার অভিযুক্ত আসামি ইকবালের অত্যাচারে অতিষ্ট মিঠাছড়া বাজার এলাকার সাধারণ মানুষ। মহাসড়কে ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, দোকান লুট, চাঁদাবাজি, হামলা, মারামারি, ভুমি দখল, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ সব ধরনের অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন তিনি। অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে ইকবাল।
থানা পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা থাকায় অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ জনসাধারণের। ইকবাল (২৫) মিরসরাই ৯নং সদর ইউনিয়ন ৫নং ওয়ার্ড আবুনগর মৃত নুর আলমের সন্তান। উঠতি বয়স থেকেই বিভিন্ন অপকর্মে তার হাতে খড়ি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দুধর্ষ অপরাধি হয়ে উঠে বলে স্থানীয়দের অভিমত। বিভিন্ন মামলায় কয়েকবার জেল খেটে এসে এখন আর আইন আদালতকেও পরোয়া করেনা সে। দম্ভের সাথে তার উক্তি পুলিশ হলো টাকার গোলাম টাকা যার পুলিশ তার। জেল খাটা তার জন্য একপ্রকার পান্তা ভাতের মতো সহজ। বিকালে জেলে তো সকালে জামিনে।
মিঠাছড়া এলাকার ৬০ বছরের বৃদ্ধ শামছুল আলম বলেন, সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তার পৈতৃক ভিটার ৮শতক জায়গা দখল করার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালতে মামলা করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে বৃদ্ধ শামছুল আলমের পারিবারিক টয়লেটে আগুন লাগিয়ে দেয়।
একই এলাকার জেসমিন আক্তার জানান, জোর পুর্বক জমি দখল করে স্থাপনা নির্মানে বাধা দিতে গেলে তার শাশুড়ির গায়ে হাত তোলে ইকবাল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। এব্যাপারেও থানায় অভিযোগ দিলে কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
মিঠাছড়া ইসলামী ফাজেল মাদ্রাসার অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক প্রতিবন্ধী আব্দুর রউফ জানান, দরিদ্র পরিবার দেখে মানবিক কারণে আমার বাড়িতে থাকতে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আমার বাড়ি দখল করতে চেয়েছিল। এছাড়া আমার মেয়েদেরকে ধর্ষণেরও হুমকি দেয় ইকবাল। পরবর্তীতে তাকেই ১লক্ষ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে বিদায় করতে হয়েছে।
একই এলাকার আবু ইয়াছিন জানান, গত বছর ২৭ নভেম্বর চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় সন্ত্রাসী ইকবাল ও তার বাহিনীর লোকজন সন্ধ্যায় মিঠাছড়া বাজারে আমাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে আমার বাম হাত ভেঙ্গে ফেলে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও পরদিনে জামিনে চলে আসে। তার ভয়ে আমি এখন শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক মিঠাছড়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মিঠাছড়া বাজারে প্রতিনিয়ত চুরি ছিনতাই হয়। বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে রাতের আঁধারে অস্ত্রের মুখে মানুষের মালামাল ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। কিন্তু তাদের ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় এখন আর থানায় ও অভিযোগ করেনা কেউ। থানায় অভিযোগ দিলে মামলা নেয়া হয় না। অভিযোগটি রেখে বিদায় করে দেয় সকলকে।
মিঠাছড়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন জানান, বাজার কেন্দ্রিক যে সকল অপরাধ সংঘটিত হয় সে সব ব্যাপারে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে থানাকে অবহিত করা হয়েছে।কারা এসব করে তাদের ব্যাপারেও জানানো হয়েছে।
মিঠাছড়া বাজার কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় চেয়ারম্যান সামছুল আলম দিদার জানান, কারা মিঠাছড়া বাজারে চুরি করে, মিঠাছড়া ইউট্রার্ণ এলাকায় রাতের আঁধারে ছিনতাই করে সব মিরসরাই থানা পুলিশ অবগত আছে। ইকবালের কোন আয়ের সোর্স নেই অথচ সে একটি সিএনজি রিজার্ভ করে সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। সিএনজিতে সে কি বহন করে সিএনজির সারাদিনে দেড় দুই হাজার টাকার ভাড়া কোথা থেকে পায় সব জানে পুলিশ। সে তো আর একা এসব করে না। তার সাথে কারা আছে কারা তাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় তাদের ব্যাপারেও থানা জানে। থানার সাথে কথা বলুন সব জানতে পারবেন।
বক্তব্য নেয়ার জন্য অভিযুক্ত ইকবালের ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মিরসরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, ইকবালের বিরুদ্ধে কোন মামলা থাকলে তা রেকর্ড দেখে বলতে হবে। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। যারা বলে অভিযোগ নিয়ে মামলা করা হয়না তাদেরকে অভিযোগ গুলি নিয়ে থানায় আসতে বলেন। এছাড়া আমি খোঁজ খবর নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি।
বিএনএ/আশরাফ উদ্দিন
,