বিএনএ: আগামী ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। এছাড়া দলের নেতাকর্মীদের ‘গ্রেফতার ও হত্যার’ প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিভাগীয় সমাবেশে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলায় ও ইউনিটে গণমিছিল ও গণবিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। বলেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের মুক্তির দাবি ও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর একই কর্মসূচি পালন করা হবে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের জন্য যে দল গুলো রাজি হয়েছে, তাদের সঙ্গেও আমরা এই দফাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। তারাও সম্মতি দিয়েছে।
বিএনপির ১০ দফা দাবি
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিসহ ১০ দফা ঘোষণা করেছে বিএনপি।
১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করা।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।
৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া।
এর আগে বেলা ১১টার আগেই রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির এ সমাবেশ শুরু হয়। অন্য বিভাগীয় সমাবেশের মতো ঢাকায়ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়। অন্য সমাবেশগুলোতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি থাকলেও এই সমাবেশের আগে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও।
মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস যোগ দিতে না পারলেও সমাবেশে ড. খন্দকার মোশাররফসহ স্থায়ী কমিটির অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে জানানো হয়, দেশে ‘চরম স্বৈরশাসন’ চলছে বিধায় জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য। তারা পদত্যাগপত্র সংসদে ইমেইল করে পাঠিয়েছেন। রোববার সংসদে গিয়ে তারা পদত্যাগ পত্র জমা দেবেন।
বিএনএ/এ আর