31 C
আবহাওয়া
২:১৪ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » শহীদ নুর হোসেন, অমিত সাহসী এক যুবকের নাম

শহীদ নুর হোসেন, অমিত সাহসী এক যুবকের নাম

শহীদ নুর হোসেন, অমিত সাহসী এক যুবকের নাম

।। আর করিম চৌধুরী।।

বিএনএ: আজ থেকে ৩৪ বছর আগে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর এইচ এম এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আট দল, পাঁচ দল ও সাত দলের নৌপথ, রেলপথ, রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি ছিল। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে সকাল থেকে নিজ নিজ জোটের ব্যানারে সমবেত হতে থাকে জনতা।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আটদলীয় জোটের অবস্থান ছিল এখন যেখানে নূর হোসেন স্কয়ার সেখানে। সাত দলের অবস্থান ছিল দৈনিক বাংলা মোড়ে। আর হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের সামনে পাঁচদলীয় জোটের অবস্থান ছিল।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আটদলীয় জোটের অবস্থানে মিলিত হলো একদল সাহসী যুবকের খণ্ড মিছিল। মিছিলটি গুলিস্তান থেকে তোপখানা মোড় পর্যন্ত বার বার প্রদক্ষিণ করে আন্দোলনকামী জনতাকে অনুপ্রাণিত করছিল। তাদের শ্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন এক অমিত সাহসী যুবক নূর হোসেন। সাহসী এই যুবক বুকে পিঠে লিখেছিল ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক/স্বৈরাচার নিপাত যাক’।

ততোক্ষণে আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নূর হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়  স্বৈরাচার এরশাদের পুলিশ বাহিনী। দ্বিধাহীন চিত্তে স্বৈরাচারের বুলেট আলিঙ্গন নেন তিনি। গুলিতে শহীন হন  নুর হোসেন।

পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার অবস্থান অস্থায়ী মঞ্চ টার্গেট করে গুলিবর্ষণ করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন  প্রাণে বেঁচে যান তিনি। পাঁচ দল ও সাত দলের অবস্থানের ওপরও  জলকামান ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে সমবেত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। কিন্তু জনতার রুদ্ররোষ ঠেকানোর ক্ষমতা স্বৈরাচারের ছিলো না।

তার রক্তদানের মধ্য দিয়ে তৎকালীন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও বেগবান হয়। অব্যাহত লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসকের পতন হয়। এর মধ্য দিয়ে এরশাদের ৯ বছরের শাসনের অবসান ঘটে এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র।

সেদিন নূর হোসেনের জীবনদান ছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক মাইলফলক, বিসুভিয়াসের আগ্নেয়গিরির এক জ্বলন্ত লেলিহান শিখা, সেদিন নূর হোসেন হয়ে উঠেছিলেন সমগ্র বাঙালির বাংলাদেশ। ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখ শহীদ যে পথ দেখিয়ে গেছেন সেই পথেই যুক্ত হলেন আরেক স্বাধীনচেতা আত্মোৎসর্গকারী যুবক শহীদ  নুর হোসেন।

এইচ এম এরশাদের পদত্যাগের পর বাংলাদেশে দুইটি হ্যাঁ-না ভোটের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এর এক বছর পর সরকারের পক্ষ থেকে নূর হোসেনের মৃত্যুর দিনটি সরকারিভাবে উদযাপনে উদ্যোগ নেয়া হয়।

দিনটিকে প্রথমে ঐতিহাসিক ১০ নভেম্বর দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগ এটিকে শহীদ নূর হোসেন দিবস করার জন্য সমর্থন দেয় এবং এই নামটি এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে।

নূর হোসেনের মৃত্যুর জন্য ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চান প্রয়াত এইচ এম এরশাদ। এখন ১০ নভেম্বরকে গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করে তার দল জাতীয় পার্টি।

পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামে ১৯৬১ সালে নুর হোসেনের জন্ম। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর স্থান পরিবর্তন করে ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে আসে তার পরিবার। বাবা মুজিবুর রহমান ছিলেন পেশায় আটোরিকশাচালক। তার মায়ের নাম মরিয়ম বিবি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর পড়াশোনা বন্ধ করে মোটরচালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন নূর হোসেন।

বিএনএনিউজ

 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ