বিএনএ ক্রীড়া ডেস্ক: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ টি টোয়েন্টি সিরিজের শেষটিতে ২৭ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ। অবশ্য আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল টাইগাররা। শেষ ম্যাচ ছিল আনুষ্ঠানিকতার। স্বভাবতই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় বাংলাদেশ। একাদশে চার পরিবর্তন আনে স্বাগতিকরা। সাকিব, মোস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন ও মেহেদীর পরিবর্তে মাঠে নামেন তাসকিন, শরিফুল, শামীম ও সৌম্য। তবে, তারা সবাই ব্যর্থ হন। এতে টাইগারদের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। শেষ ম্যাচ হারলেও ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে মাহমুদউল্লাহ’র দল।
শুক্রবার( ১০ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬১ রান করে নিউজিল্যান্ড। গত ১০ ম্যাচে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এটিই সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আগের চার ম্যাচেই ব্যর্থ ছিল নিউজিল্যান্ডের ওপেনিং জুটি।
সেই নিউজিল্যান্ডই শেষ ম্যাচে পেয়েছে দারুণ সূচনা। ইনিংসে প্রথম পাঁচ ওভারেই দলীয় স্কোর পঞ্চাশ ছাড়ায় কিউইরা। তবে শুরুর ছন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি শরিফুল ইসলাম। ষষ্ঠ ওভারে বল হাতে এসেই জোড়া উইকেট তুলে নেন তিনি।
সে ওভারে রাচিন রবীন্দ্রকে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শরিফুল। তরুণ এই পেসারের বলে পুল শট খেলতে চেয়েছেন রবীন্দ্র। কিন্তু টাইমিং ঠিক হয়নি। ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে বল মিড অফে চলে যায়। সেখান থাকা মুশফিকুর রহিম ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ লুফে নেন। ১২ বলে ১৭ রান করে ফেরেন রবীন্দ্র।
একই ওভারে ফিন অ্যালানকেও বিদায় করেন শরিফুল। রিভিউতে বেঁচে যাওয়া অ্যালানকে বোল্ড করেন শরিফুল। পাওয়ার প্লের শেষ বলে আউট হয়ে ২৪ বলে ৪১ রান করে ফেরেন অ্যালান। দলীয় ৫৮ রানেই জোড়া উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
মিডল অর্ডারে নামা দুই কিউই ব্যাটসম্যান উইল ইয়ং ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে স্থায়ী হতে দেননি আফিফ হোসেন ও নাসুম আহমেদ। চলতি সিরিজে প্রথমবার বল হাতে এসেই ইয়ংকে নিজের শিকার বানান আফিফ। রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে বল করে ইয়ংকে ফেরান তিনি। ছয় রানে সাজঘরে ফেরেন ইয়ং।
১১তম ওভারে হাতখুলে খেলার আগেই দি গ্র্যান্ডহোমকে থামান নাসুম। তরুণ এই স্পিনারের মিডল স্টামে পিচ করা ফুল লেংথের বলে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছেন গ্র্যান্ডহোম। বল চলে যায় লং অফে। সেখানে দৌড়ে গিয়ে ক্যাচ মুঠোয় জমান শামীম হোসেন। ৯ রানে থামেন দি গ্র্যান্ডহোম।
দারুণ শুরুর পর দ্রুত চার উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। হেনরি নিকোলসকে নিয়ে সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। উইকেট হারানোর চাপ সামলে হাত খুলে খেলেন অধিনায়ক। ল্যাথামের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ১৬১ রান গড়ে নিউজিল্যান্ড। ৫০ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
আর ১৬২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হতাশ করেন বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার। দায়িত্ব নিতে পারেননি বাকিরাও। মাঝে কিছুটা আশা জাগালেও শেষটা রাঙাতে পারেননি আফিফ হোসেন।
প্রথমে হতাশ করেন ওপেনার লিটন দাস। পঞ্চম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলের করা বল জায়গা বানিয়ে শট খেলার চেষ্টা করেন লিটন। কিন্তু বলের পিচ পর্যন্ত যেতে না পারায় ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। সেখানে থাকা ফিল্ডার কুগেলাইন ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ নিয়ে ফেরান লিটনকে। ১২ বলে ১০ রান করে ফেরেন তিনি।
সাকিব আল হাসান বিশ্রাম পাওয়ায় তিনে সুযোগ পান সৌম্য সরকার। তিনিও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। অফ স্পিনার কোল ম্যাকনকির অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল হালকা টার্ন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সৌম্য ওই বল ছেড়ে না দিয়ে ব্যাট চালিয়ে দেন। বল চলে যায় পয়েন্টে, ফিল্ডার রাচিন রবীন্দ্র ক্যাচ নিতে ভুল করেননি। ৯ বলে ৪ রান করে আউট হন সৌম্য। ৩৮ রানে তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
লিটন-সৌম্যর পর নাঈমকে সাজঘরে পাঠাতে দেরি করেনি নিউজিল্যান্ড। ২১ বলে ২৩ রান করে বিদায় নেন বাঁহাতি ওপেনার। নাঈমকে আউট করে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের স্বাদ পেলেন তরুণ পেসার বেন সিয়ার্স।
টপ অর্ডারদের ব্যর্থতার মাঝে মুশফিকও দায়িত্ব নিতে পারলেন না। নবম ওভারে রবীন্দ্ররের করা বল জায়গা বানিয়ে শট খেলার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু টাইমিং করতে পারেননি। লং অফে সহজ ক্যাচ হয়ে যায়। ৮ বলে ৩ রান করে আউট হন মুশফিক।
দ্রুত চার টপঅর্ডারকে হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। আফিফ হোসেনকে নিয়ে সেই চাপ সামাল দেয়ার জন্য হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম ওভারে আফিফ-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে আশা জাগিয়ে তোলে বাংলাদেশ। দুজনেই হাতখুলে খেলেন। এই জুটিতে বাংলাদেশ পায় ৬৩ রান। ১৬তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ ফিরলে বাংলাদেশের হতাশা বেড়ে যায়। মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর সোহানও আউট হয়ে যান। এরপর আফিফ একা আর দলকে জয়ের বন্দরে নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১৩৪ রানে থামে বাংলাদেশ।
এদিকে, বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ৪৮ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। একটি করে উইকেট পান আফিফ, নাসুম ও তাসকিন আহমেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৬১/৫ (অ্যালান ৪১, রাচিন ১৭, ল্যাথাম ৫০, ইয়ং ৬, গ্র্যান্ডহোম ৯, নিকোলস ২১, ম্যাকনকি ১৭ ; শরিফুল ৪-০-৪৮-২, তাসকিন ৪-০-৩৪-১, আফিফ ৩-০-১৮-১, নাসুম ৩-০-২৫-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-১৭-০, শামীম ১-০-৪-০, সৌম্য ২-০-১৪-০) ।
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৩৪/৮ (নাঈম ২৩, সৌম্য ৪, লিটন ১০, মুশফিক ৩, মাহমুদউল্লাহ ২৩, সোহান ৪, শামীম ২, তাসকিন ১, নাসুম ৩, আফিফ ৪৯ ; জ্যাকব ৪-০-২৫-১, অ্যাজাজ ৪-০-২১-২, ম্যানকনকি ৩-০-২৫-১, বেন ৩-০-২১-১, স্কট ৩-০-২৩-০, রাচিন ৩-০-১৯-১)।
বিএনএনিউজ/আরকেসি