বিএনএ, বশেমুরবিপ্রবি: স্থানীয় কতিপয় যুবকের হামলায় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বালুর মাঠ এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী মিঠু, জনি ও নিশান আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিশানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
হামলার বর্ণনা দিয়ে আহত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সোমবার রাতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপজিটে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় হঠাৎ তিনজন আরোহীসহ একটা মোটরসাইকেল আমাদের ধাক্কা দেয়। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম তারা হয়ত ভুলবশত ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু ধাক্কা দেয়ার পর তারাই আমাদের সাথে খারাপ আচরণ এবং উচ্চ বাচ্য শুরু করে। এসময় তাদের কথাবার্তায় আমাদের মনে হয়েছে তারা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলো। বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে তারা আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয় এবং পরেরদিন রাতে আমরা যখন রাতের খাবার খেতে বালুর মাঠ যাই তখন আমাদের ওপর হামলা করে।’
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘হামলাকারিদের সুস্পষ্ট সংখ্যা মনে নেই। তিনজনের হাতে ক্রিকেট ব্যট ছিলো। তবে মোট হামলাকারির সংখ্যা ৪-৫ জন কিংবা তার বেশি হতে পারে।’
এদিকে, হামলাকারিদের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আজ (বুধবার) সকাল থেকেই ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, হামলাকারীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতসহ ৫ দফা দাবিতে আজ (বুধবার) দুপুর সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতকরণ, সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধকরণ, সকল শিক্ষার্থীদের ভর্তির ১ম মাসের মধ্যে আইডি কার্ড প্রদান করা এবং মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে প্রসাশনের শক্ত অবস্থান ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
মানববন্ধনে পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা এখানে এসেছে পড়ালেখা করতে কিন্তু তারা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বালুর মাঠেও নিরাপদে যেতে না পারি তাহলে এটি একটি বড় সমস্যা। আমাদের শিক্ষার্থীরা বারবারই স্থানীয় কর্তৃক এমন হামলার শিকার হচ্ছে। ইতোপূর্বেও আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা এমন ঘটনার শিকার হয়েছে। পূর্বের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার না হওয়াতেই তারা বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শরীরে আঘাত করার সাহস পাচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারের নিকট আমাদের দাবি তারা যেনো দ্রুত হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করে এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।’
হামলাকারীদের বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা হামলার পরপরই আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম এবং তাদের বর্ণনা অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করেছি। আটককৃতরাই হামলাকারী কিনা এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি, আহতরা যদি তাদের হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত করে তাহলে তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে।’
এ ঘটনায় মামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এইচ.এম.রহমতউল্লাহ বলেন, ‘এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’
হামলাকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, হামলার ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালায় এবং দুজনকে আটক করে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
বিএনএ/ফাহীসুল, এমএফ