বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মানাধীন ২০ তলা একাডেমিক ভবনের ঠিকাদারের নিকট চাঁদা দাবি করেছেন শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মোমিনুল ইসলাম। যদিও বিষয়টিকে তিনি ‘ঈদ সালামি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনেই নির্মিত হচ্ছে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে উঁচু এই স্থাপনা। ২০১৭ সালে উপাচার্য মিজান উদ্দিন প্রশাসনের সময়কালে পাস হওয়া প্রকল্পটির বাজেট সংশোধন করে ৫১১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। যা পরবর্তীতে উপাচার্য অধ্যাপক সোবহান প্রশাসনের সময় একনেকে অনুমোদন পায়।
প্রকল্পের আওতায়: ১০ তলা দুটি আবাসিক হল, একটি শিক্ষক কোয়ার্টার, ২০ তলা একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ আরও কিছু ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স’ ২০ তলা একাডেমিক ভবন ও ছেলেদের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান আবাসিক হল নির্মানের কাজ পায়।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, গত শনিবার হবিবুর রহমান হলের সভাপতি মোমিনুল কাজ চলাকালীন সময়ে সেখানে গিয়ে ৩০ হাজার টাকা চান। হল কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য তার টাকা প্রয়োজন বলে দাবি করেন।
এদিকে, ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গত ঈদ-উল-আযহার আগে তিনি এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৩৪ হাজার টাকা চাঁদা নেন। পুনরায় চাঁদা চাওয়ায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিষয়টি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানায়।
চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে মো. মোমিনুল জানান, ঈদ সামনে রেখে আমি সালামি চেয়েছিলাম। ঈদের পরে যোগাযোগ করতে বলায় আমি শনিবার দিন সেখানে যাই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৩৪ হাজার টাকা তিনি নেননি বলে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর থেকে জানানো হয়, চাঁদা চাওয়া প্রসঙ্গে একটি অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদেরকে জানায়। প্রক্টর অফিসের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে বলেও উল্লেখে করেন পরিকল্পনা দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক খন্দকার শাহরিয়ার আলম।
যদিও প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক সমঝোতার বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। এছাড়া প্রক্টর অফিসেও বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে নিশ্চিত করেন।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য বলেন, প্রক্টর দপ্তর বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। তাছাড়া আমি নিজ উদ্যোগেও খোঁজ নিবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এমন চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। রাবি নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ‘সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ভর্তি জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত ছাত্রলীগ। প্রশাসনের কাছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্ম তুলে ধরলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না। প্রশাসনের এমন মনোভাবের কারণেই ছাত্রলীগের নেতারা চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্যসহ নানা রকম অপকর্ম করতে দ্বিধাবোধ করে না।’
রাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু জানান, বিষয়টি এখনও তার অবগত নয়। তবে অভিযোগ পেলে তাদের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনএ/সাকিব, এমএফ