26 C
আবহাওয়া
১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ - মে ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আনোয়ারায় হাট-বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে শাপলা পাতা মাছ

আনোয়ারায় হাট-বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে শাপলা পাতা মাছ


বিএনএ, আনোয়ারা : চট্টগ্রামের বঙ্গোপসাগরের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সদ্বীপ লেকে কখনো বড়শি দিয়ে আবার কখনো জাল দিয়ে ধরা হচ্ছে  বিলুপ্তি প্রজাতির শাপলা পাতা মাছ। আর বিলুপ্তপ্রায় এই মাছটি আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে অবাধে করা  হচ্ছে বাজারজাত।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে  বিলুপ্তি প্রজাতির এই শাপলা পাতা মাছ বিক্রয় নিষিদ্ধ থাকলেও আনোয়ারার মৎস্য আড়ত ও হাটবাজারে অবাধে চলছে বাজারজাত ও ক্রয়-বিক্রয়। যদিও জেলে ও আড়তদাররা বলছে এই মাছ যে ধরা বা বাজারজাত করা নিষিদ্ধ তা তারা জানে না। তবে এই মাছ একটি সম্প্রদায়ের কাছে বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় জেলেরা অতি মুনাফার লোভে এই মাছ ধরতে ও বাজারজাত করতে খুব আগ্রহী বলে জানান আড়তদাররা।

উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে মাছ বিক্রিতা জেলে ও ক্রেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, এই মাছ খুব স্বাদ এবং দেহের জন্য খুব উপকারী। বাজারে চাহিদা থাকে বেশি তাই এটি বিক্রি করতে পারলে আমদেরও মুনাফা বেশি হয়। উপজেলার জয়কালী হাট, মালঘর বাজার, ছত্তার হাটে এই মাছ বেশি বিক্রি হতে দেখা যায়।

উপজেলার সব চেয়ে বৃহৎ মাছের আড়ত কালাবিবির দিঘি মৎস আড়ত সূত্র জানা যায়, গত বর্ষায় এক সপ্তাহের ব্যাবধানে  বঙ্গোপসাগরের সদ্বীপ লেক থেকে একটি ৬ মণ ওজনের এবং আরেকটি ৪ মণ ওজনের বড়শি দিয়ে শাপলা পাতা মাছ আটক করে আনোয়ারার জেলেরা। যা এই আড়তে এত বড় শাপলা পাতা মাছ বিক্রয় ছিলো বিরল। আড়তদাররা জানায়, এই দুইটি শাপলা পাতা মাছ বিক্রি হয়েছিল প্রায় দুই লাখ টাকা ।

এদিকে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ২০১৭ আইনের ১৯-এ বলা হয়েছে, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা ও তদারকি কমিটি থাকার কথা। যা জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণী রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। তবে আনোয়ারা একটি সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা হলেও এখানে এ জাতীয় কোনো কমিটি নাই বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন । ১৭-এর এই আইনে আরেক ধারায় বলা হয়েছে বিলুপ্তিপ্রায় জীববৈচিতত্র্য প্রাণী কোনো সময় ধরা বা বাজারজাত করা যাবে না। করলে এটি দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে এই আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এই মাছ বিক্রি হলেও বিলুপ্তি প্রজাতির এই শাপলা পাতা মাছ রক্ষায় কোন অভিযান পরিচালনা করছে না উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।

এব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড সায়েন্স বিভাগের  অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকেই যাচ্ছে। সাগরে যে বাণিজ্যিক জাহাজ গুলো রয়েছে সেগুলোর অধিক চলাচলের কারণে সাগরেও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ এ দুটি বিষয় এক ও অভিন্ন বিষয়। আসলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে উদাসীন। জীববৈচিত্র্য রক্ষা না হলে দিন দিন পরিবেশের আরো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।   পরিবেশের স্বার্থে এই মাছ রক্ষায় প্রশাসনের জোড়ালো ভূমিকা রাখা উচিৎ বলে জানান তিনি। তিনি আরে জানান শাপলা পাতা মাছ মানবদেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে মাছটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। দেশে শাপলা পাতা মাছ ধরা এবং বিক্রয় আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এখন এই মাছ সবখানে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে নিধন চলতে থাকলে একসময় এই মাছ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

আনোয়ারা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হক বলেন, শাপলা পাতা মাছটি বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে এ মাছ ধরা এবং বিক্রি করা দন্ডনীয় অপরাধ। এই মাছ রক্ষায় আমরা সামনে থেকে আরো জোরদার বাজার মনিটরিং শুরু করা হবে।

এবিষয়ে বন্য প্রাণী ও জীববৈচিতত্র্য সংরক্ষণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই মাছ বাজারজাত ও ক্রয়-বিক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শাপলা পাতা মাছ রক্ষায় র‌্যাব ও নৌপুলিশের সমন্বয়ে বিশেষ ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সাগরে এই মাছ ধরতে না পারলে  অসাধু ব্যবসায়ী ও জেলেরা এই মাছ ধরা বা বাজারজাত আর করতে পারবে না।

বিএনএনিউজ/এনামুল হক নাবিদ/এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ