27 C
আবহাওয়া
১০:১০ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » উপকার ভোগীদের বিরুদ্ধে সরকারী গাছ কাটার অভিযোগ

উপকার ভোগীদের বিরুদ্ধে সরকারী গাছ কাটার অভিযোগ

উপকার ভোগীদের বিরুদ্ধে সরকারী গাছ কাটার অভিযোগ

মিরসরাই(চট্টগ্রাম) : মিরসরাইয়ের সংরক্ষিত পাহাড়ি বনের রক্ষকরাই ভক্ষকের ভুমিকায় অবর্তীর্ণ হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে খোদ বনবিভাগের চুক্তিভুক্ত এক উপকার ভোগী সহ কতিপয় দুষ্কৃতিকারীরা এসব গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে।অভিযোগে আরও  জানা যায়, মধ্য ওয়াহেদপুর এলাকায় বাবুল ও টিটু দুটি গ্রুপে আলাদা আলাদাভাবে পাহাড়ি সরকারি গাছ কেটে সাবাড় করছে।

অভিযুক্তরা হলেন চুক্তিভুক্ত উপকারভোগী মোহাম্মদ মুন্না (২৬) পিতা মো: ভোলা, নজরুল ইসলাম ভূইয়া বাবলু (৩৩) মো: মানিক (৪৫) পিতা নুর আলম, মো: হাকিম আলি (৩৫) পিতা: নুরুজ্জামান, টিটু (৩৫) পিতা: মোহাম্মদ কবির প্রমুখ। তারা সকলেই ১৫ নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের ৪ নং মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বারৈয়াঢালা ও বড়তাকিয়া বিট কর্মকতারা চোরাই কাঠ উদ্ধার করলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে বিট কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ব্যাক্তি মালিকানা বাগানের সেগুন গাছ চুরি করে বিক্রির অপরাধে মুন্নাসহ ৩জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হলেও এখনো কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।

বারৈয়াঢালা রেঞ্জ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালে সরকার কর্তৃক স্থানিয় উপকার ভোগীদের মাঝে চুক্তির মাধ্যমে প্রতি জন উপকার ভোগীকে ১ একর করে পাহাড়ী বনভুমি বরাদ্ধ দেয়া হয়। প্রতি একর পাহাড়ি ভুমিতে ১ হাজার মূল্যবান গাছের চারা রোপন করা হয়। তারমধ্যে শাল, সেগুন, গামারী, ইউক্লিপটাস উল্লেখযোগ্য। শর্ত অনুযায়ী চুক্তি ভূক্ত উপকারভোগীরা বরাদ্ধকৃত পাহাড়ি অংশে সরকার কর্তৃক তৈরিকৃত বাগানের মূল্যবান গাছের রক্ষনাবেক্ষন, পাহারা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। চুক্তির মেয়াদ শেষে সরকারি টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করে লভ্যাংশ নিয়ে যাবে উপকারভোগীরা। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে বিপরীত।

প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, চুক্তিভুক্ত উপকার ভোগীরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছ পাহারা দিয়ে রক্ষা না করে নিজেরাই সেই গাছ ভক্ষণ করছে। মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বিটের অর্ন্তগত মধ্যম ওয়াহেদ পুর এলাকার পাহাড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সরসজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, শাল, সেগুন, গামারী ও ইউক্লিপটাসসহ মূল্যবান গাছ কেটে নেয়ার দৃশ্য। গাছের মূল্যবান অংশ কেটে নেয়ার পর গাছের গোড়া গুলির করুণ চিত্র দেখে যে কারো মন খারাপ হবে। সরকারি ও ব্যাক্তিমালিকানায় তৈরি করা বনের গাছ কেটে নেয়ার পর পড়ে রয়েছে গাছের শত শত গোড়া। প্রতি কদমে কদমে এমন চিত্র।

সরকারী বনের মূল্যবান গাছ চুরি করে ক্ষান্ত হতে পারেনি চোরের দল। তারা সরকারি গাছের পাশাপাশি ব্যাক্তিমালিকানা বাগানের গাছও চুরি করে নিয়ে গেছে।

কাঠ পাচারের খবর পেয়ে মিরসরাই থানা পুলিশের একটি ফোর্স ও বারৈয়াঢালা বন বিটের কর্মকর্তারা অভিযানে যান। কিন্ত ব্যর্থ হন। পরে গোপন সংবাদ পেয়ে বারৈয়াঢালা বিট কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম বাবুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বাবুলের উপস্থিতিতে ১৪ টুকরো গামারী গাছ, ৬ টুকরো সেগুন গাছ ও ৪ টুকরো ইউক্লিপটাস গাছ সহ মোট ৮৪.৮৭ঘন ফুট চোরাই গাছ উদ্ধার করে বনবিভাগের হেফাজতে নিয়ে যান। তবে গাছ উদ্ধারের ৫ দিন অতিবাহিত হলেও গাছ চুরির সাথে সম্পৃক্ত কাউকে অভিযুক্ত করে কোন প্রকার আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বনবিভাগ। এতে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

‘যারা গাছের ব্যবসা করে সবাই চোরাই গাছ কিনে আমি একা না’

বাড়ি থেকে গাছ উদ্ধারের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাবলু জানান, মুন্না ও মানিক আমার পরিচিত লোক তারা ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমার কাছে কিছু গাছ রেখে যায় পরের দিন বন বিভাগ ওই গাছ নিয়ে গেছে। আমি উপস্থিত থেকেই গাছ গুলি বনবিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছি। যারা গাছের ব্যবসা করে সবাই চোরাই গাছ কিনে আমি একা না। গাছ নেয়া যদি আমার অপরাধ হয় তাহলে আইন অনুযায়ী যা হবার তাই হবে, আমি সেটার জন্য প্রস্তুত।

হাকিম আলি জানান,  আমি গাছ কাটিনা, আমি কৃষি কাজ করি আমাকে অযথা এখানে জড়নো হয়েছে।

টিটু জানান, আমি গাছ কেনা বেচা বা কাটার সাথে সম্পৃক্ত নই। শুনেছি, রুহুল আমিনের বাগান থেকে ৩টা সেগুন গাছ কেটে ফেলছে সেটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।

মিরসরাই থানা পুলিশের উপপরিদর্শক আতাউর জানান, গাছ কাটার ব্যাপারে একটি অভিযোগের তদন্তভার আমাকে দেয়া হয়েছে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাছ কাটার সত্যতা পেয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি।

এব্যাপারে জানতে চাইলে বারৈয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা চোরাই গাছ উদ্ধার করেছি তবে এখনো কোন প্রকার আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিষয়টি আমরা গভীর ভাবে তদন্ত করছি। কারা কারা এটার সাথে সম্পৃক্ত, কারা তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। তাদের সকলকে সনাক্ত করে একসাথে সকলকে আসামী করে আমরা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। উদ্ধারকৃত গাছের মধ্যে ব্যাক্তি মালিকানা গাছ আছে বলে দাবি তুলেছেন একটি পক্ষ । তারা মিরসরাই থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা সে ব্যাপারেও তদন্ত করছি।

bnanews24,আশরাফ উদ্দিন,জিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ