বিএনএ, ডেস্ক : পাহাড়, সমুদ্র, নদী, উপত্যকা ও সবুজ অরণ্যবেষ্টিত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রাচ্যের রানি খ্যাত চট্টগ্রাম শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ৫টি ওয়ার্ড নিয়ে ৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ১৮৬৩ সালের ২২ জুন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম প্রশাসক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন মি. জে.ডি ওয়ার্ড।
১৯৭৭ সালের ২৭ জুন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি নাম পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম পৌরসভা করা হয় চেয়ারম্যান হন ফজল করিম। ১৯৮২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম পৌরসভাকে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ব্রিগেডিয়ার মফিজুর রহমান চৌধুরীকে।
১৯৯০ সালের ৩১ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নাম পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন করা হয়। জাতীয় পার্টির মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীকে মেয়র হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হন বিএনপি। তৎপরবর্তীতে ১৯৯১ সাল হতে ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন মেয়রের দায়িত্বপালন করেন। তখন থেকে চট্টগ্রাম শহরে ভাসমান হকাররা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করে। যা একেবারেই অবৈধ। শুধু রাস্তা নয় ফুটওভার ব্রীজ, ফুটপাত দখল করে স্থায়ী দোকানও নির্মাণ করেছিল। যার ধারাবাহিকতা পরবর্তীতেও অব্যাহত থাকে।
১৯৯৪ সালের ৩১ জানুয়ারি’ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে টানা ১৭ বছর মেয়রের দায়িত্বপালন করেন। তিনি ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ দূরে থাক, নিজে ফুটপাত ও নালা দখল করে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বানিয়েছেন!
পরবর্তীতে বিএনপির সমর্থনে মোহাম্মদ মনজুর আলম এবং আওয়ামী লীগের আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন ৫ বছর করে দায়িত্ব পালন করলেও তারাও মহিউদ্দিন চৌধুরীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। ফলে চট্টগ্রাম হকার নগরিতে পরিণত হয়।
১৯৯১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্তত: ৫ জন মেয়র পেয়েছেন নগরবাসি। তারা কেউই ফুটপাত ও সড়ক দখল করে থাকা হকারদের উচ্ছেদ করতে পারেননি। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর পথচারি, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং যানচলাচলে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা যানযটে আটকে থাকার পাশাপাশি লাখ লাখ শ্রমঘন্টা অপচয় হতো।
অন্যদিকে ফুটপাতের দখলকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্টপোষকতায় তৈরি হয়েছিল দখল ভিত্তিক বিভিন্ন চাঁদাবাজ গ্রুপ ও উপগ্রুপ। অভিযোগ আছে, থানা পুলিশ ও সিটি করপোরশনের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারিরাও হকারদের থেকে তাদের নিয়োজিত সোর্সের মাধ্যমে প্রতিদিন চাঁদা তুলে ভাগবাটোয়ারা করতো। ফলে হকাররা দিন দিন পরিধি বৃদ্ধি করে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত প্রধান প্রধান সড়কগুলোকে বাজারে পরিণত করেছিল।
২০২১ সালের ২৭ শে জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদে চেষ্টা করলেও শাসকদলের হকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণকারি নেতা, থানা পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের কতিপয় কর্মচারি-কর্মকর্তা ও কাউঞ্চিলরদের অসহযোগিতার কারণে হকার উচ্ছেদের চেষ্টা করেও সফল হয়নি।
সম্প্রতি সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ঘুরে দাড়িয়েছেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের সহযোগিতায় চট্টগ্রামে সর্বকালের সর্ববৃহৎ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন তিনি। এতে নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার, আমতল, নিউ মার্কেট, নতুন রেলস্টেশন, পুরাতন রেলস্টেশন, ফলমন্ডি, আগ্রাবাদ বানিজ্যিক এলাকা থেকে সড়ক দখল করে থাকা অন্ততঃ ৬ হাজার হকারদের উচ্ছেদ করেছেন। এতে নগরের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে শুরু করেছে।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্দেশনায় সফল এই হকার উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম সিটি
করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট সাব্বির রহমান সানি। উচ্ছেদ অভিযানের পর উদ্ধার হওয়া জায়গাতে কাটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হচ্ছে। পুনরায় যেন হকাররা এ স্থান দখল করতে না পারে সেজন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এতে নগরবাসী মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। নগরবাসি বলেছেন, মীর নাসিরউদ্দিন, এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী, মনজুর আলম, আ.জ.ম নাছির উদ্দিন ৩১ বছরে যা পারেননি, তা মাত্র ৩ বছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী করে দেখালেন। নগরবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন প্রচারবিমূখ এই রাজনীতিক।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী