।।মাওলানা মাজহার আল কুরাইশী।।
দেশের সকল কওমি মাদ্রাসায় হাটহাজারী মাদ্রাসার যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও হাটহাজারীতে বন্ধ হওয়া খতমে বুখারী অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছে অনেক মাদ্রাসায়। রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়া সংলগ্ন জামিয়া রহমানিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসায় আগামী ১১ মার্চ ২০২১ তারিখে বিশাল পরিসরে খতমে বুখারী অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। স্বার্থ হাসিলের জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসার সিদ্ধান্তের সাথে ভিন্নমত পোষণ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠান না করার বিষয়টি জেনেও মুফতি মনির হোসেন কাসেমী তার দখলকৃত বারিধারা মাদ্রাসায় অর্থের লোভে খতমে বুখারী অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন এবং এতে জুনায়েদ বাবুনগরীসহ বিশিষ্ট আলেমদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বারিধারা মাদ্রাসায় তার কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।
খতমে বুখারী অনুষ্ঠান পালনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থ উপার্জন। সম্প্রতি, দখলকৃত বারিধারা মাদ্রাসাটিতে খতমে বুখারী আয়োজন করার মাধ্যমে মনির হোসেন কাসেমীর অবস্থান সুদৃঢ় ও পাকাপোক্ত করাই মূল উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠানে আগত অতিথি জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অন্যান্যদের ঢাল বানিয়ে তিনি তার রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের পাশাপাশি বিভিন্ন উৎস থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়ের উৎসবে নেমেছেন। এক্ষেত্রে জুনায়েদ বাবুনগরীর পাশাপাশি বারিধারা মাদ্রাসার স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লামা নুর হোসেন কাসেমীর পুত্র জাবের কাসেমীকেও ব্যবহার করে নুর হোসেন কাসেমীর দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনামকে ক্ষন্ন করছে।
খতমে বুখারী অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানের বাহানা দিয়ে মনির হোসেন কাসেমী প্রায়শঃই মাদ্রাসার সাবেক ছাত্রদের আমন্ত্রণ জানিয়ে শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে থাকেন।
সহীহ বুখারী শরীফের শেষ হাদিসটি যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাইরের আলেম দ্বারা পড়িয়ে শেষ করা হয়, তাই আমাদের দেশে ‘খতমে বুখারী’ নামে পরিচিত। প্রথাগতভাবে মাদ্রাসায় বুখারী শরীফ শেষ করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসাতে বহিরাগত আলেমদের দাওয়াত দিয়ে খতমে বুখারী নামক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। যিনি সারা বছর মেহনত করে পুরো বুখারী শরীফ পড়াতে পারেন তিনি কি শেষের একটি হাদিস পড়াতে পারবেন না? শেষের একটি হাদিস পড়ানোর জন্য ভাড়া করে শায়েখ আনার কথিত রেওয়াজটি মূলত নিয়মিত পুরো বুখারী শরীফের শিক্ষকের অধিকার হরণ ও এক প্রকার অপমানজনক অনুষ্ঠান
ছাড়া আর কিছু না। বর্তমানে উক্ত অনুষ্ঠানটি এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, এটি আসলেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান নাকি টাকা আয়ের উৎস তা বোঝা মুশকিল।
বাংলাদেশের ক্বওমী মাদ্রাসাসমূহ উপমহাদেশের অন্যতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের কারিকুলাম ও আচার অনুষ্ঠানগুলো অনুসরণ করে আসছে। দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা আবুল কাসেম নোমানী বলেছেন, বর্তমানে বিভিন্ন মাদরাসায়
খতমে বুখারির নামে যে মাত্রাতিরিক্ত প্রথা চালু হয়েছে তা শরিয়তের সংগে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ ক্বওমী মাদ্রাসা ও ইসলামী বিদ্যাপীঠ হাটহাজারী মাদ্রাসায় প্রতি বছরই খতমে বুখারী আয়োজন হলেও চলতি বছর হতে মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক খতমে বুখারী অনুষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
মতামতের জন্য বিএনএ সম্পাদক ও কর্তৃপক্ষ কোনভাবে দায়ী নয়।