বিএনএ, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন ওই বিভাগেরই এক ছাত্রী। অভিযোগপত্রের সঙ্গে কল রেকর্ডসহ সহায়ক প্রমাণ যুক্ত করেছেন তিনি।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র দেন ওই ছাত্রী।
অভিযোগপত্রটি হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, অভিযোগপত্রটি হাতে এসেছে। এটি উপাচার্য স্যারের অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। আজকে উপাচার্য স্যার টুঙ্গিপাড়ায় গেছেন। আগামীকাল স্যারের কাছে জমা দেব। স্যার এ বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
প্রক্টরের কাছে অভিযোগপত্রে ছাত্রী উল্লেখ করেন, অধ্যাপক নাদির জুনাইদের যৌন হয়রানির কারণে গত দেড় বছর প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছেন তিনি। এক পর্যায়ে ঘুমের ওষুধ নিতে হয়েছে তার। গত বছরের শুরুতে কাউন্সিলিংও করেন তিনি। এক পর্যায়ে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেন।
ওই ছাত্রী অভিযোগে বলেন, তিনি তার বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলেন এবং স্পষ্টভাবে আমার দিকে ইঙ্গিত করেন। আমি খুব অবাক হই এবং খুব অস্বস্তিতে পড়ি। তবে আমি কৌশলে তাকে নাকচ করে দিই।
অধ্যাপক নাদির জুনাইদ বিভিন্ন দ্বৈত-অর্থবোধক (ডাবল মিনিং) কথা বলতেন উল্লেখ করে ওই ছাত্রী বলেন, আমাকে উনার সাথে বাজে জিনিস কল্পনা করতে প্ররোচিত করতেন। বলতেন, “ধরে নাও তোমার সাথে বিয়ে হলে, তোমার সাথে এটা করলে ওটা করলে কেমন হতো, মনে কর, আমরা সি-বিচ গিয়েছি, সান-বাথ…….”। এ ছাড়া বিভিন্ন ডাবল মিনিং কথাবার্তা বলতেন এবং সারাক্ষণ “সেক্সুয়াল” কথোপকথনে প্ররোচিত করতেন।… এ সময় আমি ফ্রি থাকলেই ঘন ঘন দেখা করতে চাইতেন এবং তার বাসায় আমন্ত্রণ জানাতেন। আমি প্রতিবারই বিভিন্ন অযুহাতে নাকচ করতাম।
অধ্যাপক নাদির এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিতেন, যার বেশিরভাগ কথা সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হয়ে থাকে বলে অভিযোগপত্রে জানান ছাত্রী। অভিযোগকারী বলেন, উনি আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন করতেন, দেখতে কেমন, ইত্যাদি নানান প্রশ্ন উনি খুব আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করতেন। এড়িয়ে গেলেও আবার একই কথা রিপিট করতেন, আমাকে প্রায় জিজ্ঞেস করা হত আমার কেন কোনো অনুভূতি হয় না? আমার শারীরিক কোনো চাহিদা কেন নাই? আমার কিছু ইচ্ছা করে কি না?
সাড়া না দিলে ওই ছাত্রীকে ‘অনুভূতিহীন’, ‘নির্বোধ’, ‘ডাক্তার দেখানো উচিত’—প্রভৃতি বিষয় বলতেন অভিযোগ তুলে ছাত্রী বলেন, আমাকে এমনও বলেছেন, “আই অ্যাম সরি টু সে, তুমি স্বাভাবিক না, তোমার ডাক্তার দেখানো উচিত।” উনি বারবার আমাকে মানসিক চাপ দিতেন, কেন কোনো অনুভূতি নাই? কেন উনাকে আমি ফিল করি না! উনি আমাকে এত বুঝাচ্ছেন, তবুও আমি সাড়া দিতাম না। উনি আমাকে এই বলে চিৎকার করে বলেন যে, “তুমি একটা নির্বোধ, অনুভূতিহীন গবেট”।
অধ্যাপক নাদির জুনাইদের ব্যক্তি-আক্রোশের’ শিকার হওয়ার ভয়ে গত দেড় বছর মুখ বুজে সব সহ্য করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন ছাত্রী। তিনি বলেন, শুধু এই ভয়ে আমার পরিবারের কাছে আমার দেড় বছর আগে থেকে বলতে হচ্ছে যে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করব না। দরকার হলে নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব! কারণ আমি অনেক কাছ থেকে দেখেছি একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত আক্রোশ কতটা ভয়ংকর হতে পারে। যেই ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হতে পারি বলে আমি গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নিজের ওপর হওয়া যৌন হয়রানি মুখ বুজে সহ্য করেছি।
অধ্যাপক নাদির জুনাইদ কেবল তাকেই নয়, বরং আরও অনেক ছাত্রীর ‘শরীরের অবয়ব নিয়ে নোংরা’ মন্তব্য করতেন বলে অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। তিনি বলেন, উনি পরিচয়ের শুরুতে উনার সুন্দর আচরণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করেন। আদর্শের ভেক ধরে থাকেন। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে নারী শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আমার সাথে কথোপকথনের সময়ও উনি বিভিন্ন নারী শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ করতেন। এমনকি বিভিন্ন সময় তাদের শারীরিক অবয়ব নিয়েও নোংরা মন্তব্য করেছেন। আমার মত অনেক শিক্ষার্থীকেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন বিভিন্ন সময় জানতে পেরেছি।
সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপক বিভাগে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে ছাত্রী বলেন, আমরা নিজ বিভাগে ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠছি, নিজেদের মধ্যে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করছি। একজন শিক্ষকের কাছে সবাই কোণঠাসা হয়ে পড়লাম! যেখানে উনি উনার মতো একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন, আর সামনে করতে যাচ্ছেন।
বিএনএ/এমএফ/ হাসনা