বিএনএ ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে ১১টি বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ ১১ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
নির্দেশনাগুলো হলো:
১. করোনার সংক্রমণ রোধে দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সকল জনসমাগমস্থলে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক।
২. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য প্রদর্শন করতে হবে করোনার টিকা সনদ।
৪. ১২ বছরের বেশি বয়সী সকল শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকার সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না।
৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং-এর সংখ্যা বাড়ানো এবং সমুদ্র বন্দরগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনও সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৬. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে করোনার টিকার সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।
৭. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে করোনার টিকা সনদধারী হতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সকল মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন ইমামরা। এই বিষয়টি নিশ্চিত করবেন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা।
৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।
১০. উন্মুক্ত স্থানে সর্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
১১. কোনও এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এর আগে গত শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) করোনা প্রতিরোধে চার দফা সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। পরামর্শক কমিটির ৫০তম সভায় এই সুপারিশ করা হয়। সভা শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
চার দফা সুপারিশ হলো-
১. পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ সারাবিশ্বে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশেও সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী, ফলে সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা প্রকাশ করছে পরামর্শক কমিটি। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি উক্ত কর্মসূচী বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছে। প্রয়োজনে কর্মসূচী বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের জন্য আইনী ব্যবস্থা যেমন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পরামর্শ দেয় কমিটি।
শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, হাত পরিষ্কার রাখা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন স্থানে পুনরায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে সকল সামাজিক (বিয়ের অনুষ্ঠান, মেলা ইত্যাদি), ধর্মীয় (ওয়াজ মাহফিল) ও রাজনৈতিক সমাবেশ এই সময় বন্ধ করতে হবে। সভা/কর্মশালার ব্যবস্থা অনলাইনে করা প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ ও নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের বিষয়ে নিয়মিত নজরদারির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে পরামর্শক কমিটি।
২. শিক্ষার্থীসহ সকলকে দ্রুত ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৩. সকল পয়েন্ট অফ এন্ট্রিতে স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন আরও জোরদারকরণে সুপারিশ করা হয়।
৪. সংক্রমণ রেড়ে গেলে তা মোকাবিলায় হাসপাতাল প্রস্তুতি বিশেষ করে পর্যাপ্ত সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেয় কমিটি।
বিএনএনিউজ/আরকেসি