অন্যায় জেনেও আমি খুশি হয়েছিলাম এই জন্য যে, এই গণপরিষদের সদস্যরা কোনোদিন শাসনতন্ত্র দিবে না।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩৩৮
গোলাম মোহাম্মদ বেআইনিভাবে গণপরিষদ ভেঙে দিয়েছিলেন। তবু জনগণ এতে খুবই আনন্দিত হয়েছিল। কারণ, গণপরিষদের সদস্যদের হয়ত আট বৎসর পর্যন্ত থাকার আইনত অধিকার থাকলেও ন্যায়ত অধিকার ছিল না। আট বৎসর পর্যন্ত যে গণপরিষদ দেশকে একটা শাসনতন্ত্র দিতে পারে নাই, নির্বাচনে পরাজিত হয়েও যারা পদত্যাগ না করে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচিত সদস্যদের বরখাস্ত করে, তাদের উপর জনগণের আস্থা থাকতে পারে না। যদিও গোলাম মোহাম্মদ দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে এ কাজ করেন নাই, করেছিলেন নিজের এবং একটা অঞ্চলের একটা বিশেষ কোটারির স্বার্থ রক্ষা করার জন্য।
অন্যায় জেনেও আমি খুশি হয়েছিলাম এই জন্য যে, এই গণপরিষদের সদস্যরা কোনোদিন শাসনতন্ত্র দিবে না। আর শাসনতন্ত্র ছাড়া একটা স্বাধীন দেশ কতদিন চলতে পারে? গণপরিষদের সদস্যদের লজ্জা না করলেও আমাদের লজ্জা করত। গণপরিষদের অধিকাংশ সদস্যই মুসলিম লীগার। মুসলিম লীগ নেতারা যখন লেজ গুটিয়ে আত্মসমর্পণ করল একমাত্র মরহুম তমিজুদ্দিন খান সাহেব গণপরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসাবে গোলাম মোহাম্মদের এই আদেশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আমারা জেলে বসে খবরের কাগজের মারফতে যেটুকু খবর পাই, তাই সম্বল, তাই নিয়েই আলোচনা করি।
কয়েকজন বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। এখন আমি, ইয়ার মোহাম্মদ খান, দেওয়ান মাহবুব আলী, বিজয় চ্যাটার্জী, অধ্যাপক অজিত গুহ, মোহাম্মদ তোয়াহা ও কোরবান আলী এক জায়গায় থাকি। দিন আমাদের কেটে যাচ্ছে কোনোমতে। অজিত বাবু আমাদের খাওয়া-দাওয়ার দেখাশোনা করতেন। বাবুর্চি তিনি ভালই ছিলেন। অসুস্থ হয়েও নিজেই পাক করতেন। তিনি মুক্তি পাওয়ার পরে তোয়াহা ভার নিল। অজিত বাবুর মত ভাল পাকাতে না পারলেও কোনোমতে চালিয়ে নিত। আমি ও দু’একজন তার পিছু নিতাম। সে রাগ হয়ে মাঝে মাঝে বসে থাকত। আবার অনুরোধ করে তাকে পাঠাতাম। তার রাগ বেশি সময় থাকত না। কোরবান আলীর একটু কষ্ট হত। ভাগে যা পড়ত তাতে তার হত না। শরীরটা বেশ ভাল ছিল, খেতেও পারত।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৮০।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩৩৭