বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প (যানবাহন ওঠানামার পথ) নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। র্যাম্প নির্মাণ বন্ধে একবার গড়ে উঠেছিল আন্দোলন। পুরোদমে চালুর আগ মুহূর্তে এবার নগরীর জিইসি মোড়ে র্যাম্প নির্মাণ নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে যানবাহন।
চলতি ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে এক্সপ্রেসওয়ে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সময় থেকে টোল দিয়ে পুরোদমে চলবে ১০ ধরনের যানবাহন। ইতিমধ্যে টোল হারও চূড়ান্ত করেছে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। নিয়োগ করা হচ্ছে টোল আদায়কারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্ধারিত সময়ে এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সূত্র বলছে এই মেগা প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্প কাজ শেষ করার সময় একাধিকবার বাড়ানো হয়। আবার ব্যয়ও বাড়ানো হয় দফায় দফায়। প্রকল্পের বড় অঙ্কের ব্যয় নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম। গত শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
দাবি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, বিগত সরকারের আমলে বাস্তবায়ন করা কয়েকটি মেগা প্রকল্পের একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। লালখান বাজার-পতেঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয় র্যাম্প নিয়ে। কয়েকটি র্যাম্প প্রকল্প থেকে সাময়িক বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু বাওয়া স্কুল ও জিইসি জংশনের মধ্যে হোটেল পেনিনসুলার সামনে থেকে প্রস্তাবিত র্যাম্পটি বাদ দেওয়া হয়নি। অপরিকল্পিত ও ব্যক্তিস্বার্থে নির্মাণাধীন এই র্যাম্পের বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ করার পরও এর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়নি।
বাওয়া স্কুল ও জিইসি জংশনের মধ্যে যে র্যাম্প নির্মাণের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, জায়গাটি অত্যন্ত যানজট প্রবণ। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। এখানে নতুন র্যাম্প নির্মাণ করলে মূল সড়কের প্রশস্ততা কমে জিইসি জংশনের যানজট বেড়ে যাবে। পাশাপাশি এমএম আলী সড়ক জংশন, ওয়াসা এবং লালখান বাজার মোড়ে যানজটের তীব্রতাও বেড়ে যাবে। তবে র্যাম্পের কারণে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন সিডিএ প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, জিইসি মোড় জংশনে র্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে বলা হলেও বিষয়টি সত্য নয়। সেখান থেকে অন্তত ৪০০ মিটার দূরে র্যাম্প নির্মাণ হচ্ছে। এটি তো জিইসি মোড়ে হচ্ছে না। চলমান কাজের মধ্যে মোট ৯টি র্যাম্প হবে। চারটির কাজ শেষের দিকে। বাকি পাঁচটির নির্মাণকাজও শেষ করা হবে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে পুরোদমে চালু হবে। অর্থাৎ এক্সপ্রেসওয়েটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে।
তিনি র্যাম্প নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে বলেন, জিইসি মোড় থেকে অনেক দূরে র্যাম্প নির্মাণ হচ্ছে জনগণের যাতায়াত সুবিধার জন্য। বিশেষ করে লালখান বাজার এলাকার লোকজনের সুবিধার জন্য। এখানে তো কারও অসুবিধা হওয়ার কথা না।
এদিকে দফায় দফায় পরিবর্তনের পর এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনের টোল হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবশেষ গাড়ির শ্রেণিভিত্তিক চূড়ান্ত করা টোল হার অনুযায়ী প্রাইভেটকার চলাচলে ৮০ টাকা, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, পিকআপ ১৫০, মিনিবাস ২০০, বাস ২৮০, ট্রাক (চার চাকা) ২০০, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০, কাভার্ড ভ্যান ৫০০ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য ৩০ টাকা দিতে হবে। তবে কনটেইনার বহনকারী বৃহদাকার ট্রেইলর ও মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমোদন মেলেনি।
নগরীর অভ্যন্তরে লালখান বাজার থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেতে যানজটে বেশি সময় লাগত। এক ঘণ্টার পথ পার হতে লাগত দুই ঘণ্টার বেশি সময়। মূলত বিমানবন্দরগামী যানবাহন দ্রুত চলাচলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। দৈর্ঘ্যে ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে টোল ছাড়া এখন নানা ধরনের যানবাহন চলছে। সিডিএর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান র্যাঙ্কিন। চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। অভিযোগ রয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বেশি সংখ্যক বাঁক আছে। এতে চলাচলকারী যানবাহনগুলো দুর্ঘটনায় পড়ার ঝুঁকি আছে। দেড় মাস আগে রাতের বেলা বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। পরীক্ষামূলক সময়ে এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সব ধরনের গাড়ি চলাচলের সময় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, পুরোদমে আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর আগে টোল হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবশেষ চূড়ান্ত করা টোল হার আর পরিবর্তন হবে না। এই হারে টোল দিয়ে অনুমোদিত যানবাহন চলবে এক্সপ্রেসওয়েতে।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ/এইচমুন্নী