বিএনএ, ঢাকা: এবার বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে। গত বছর পাঠ্যবই মুদ্রণে ব্যয় ছিল ১হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে চলতি বছরে এই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকায়। মুদ্রণ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবার পেছনে রয়েছে কয়েকটি বড় কারণ।
কেন মুদ্রণে খরচ বেড়েছে?
১. বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি
গত বছর প্রায় ৩৪ কোটি বই মুদ্রণ করা হয়েছিল, কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২টি।
নতুন শিক্ষাক্রম থেকে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরে আসায় মাধ্যমিকে বইয়ের সংখ্যা ১০ থেকে বেড়ে ১৩টি হয়েছে।
দশম শ্রেণির জন্য বিশেষভাবে বই তৈরি করতে হচ্ছে, যা অতিরিক্ত ব্যয়ের অন্যতম কারণ।
২. উন্নত মানের বই
আগের বছরগুলোর মতো কম মানের বই গ্রহণ করা হচ্ছে না। এবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে দরপত্রের সব শর্ত পূরণ করেই কাজ করতে হবে। মান উন্নত করতে গিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে।
৩. উপকরণের দাম বৃদ্ধি
কাগজসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, কাগজের দাম প্রতি টন ৯০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এখন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে।
ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশে ঠেকেছে।
প্রেস মালিকদের ভাষ্য
প্রেস মালিকদের মতে, এবার মুদ্রণের মান উন্নত করতে নির্ধারিত দরের চেয়ে কিছুটা বেশি দর দিতে হয়েছে। কারণ,
কাগজ, প্রিন্টিং, বাইন্ডিং ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। গত বছর আর্ট কার্ডের দাম ছিল ৯০ হাজার টাকা, যা এখন এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। ভালো মানের বই মুদ্রণের জন্য দরপত্রের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, “আমাদের প্রেসগুলোতে বছরে মাত্র তিন মাস কাজ হয়। স্থায়ী কর্মীদের বেতন দিতে হয় সারা বছর। তাই যদি প্রতি ফর্মায় ১৫ থেকে ২০ পয়সা লাভ না করি, তবে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হবে।”
বই মুদ্রণের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ
এবারের শিক্ষাবর্ষে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২টি বই ছাপানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের জন্য ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি স্কুলের জন্য বাকি প্রায় ৩০ কোটি বই।
প্রাথমিক স্তরের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ শেষ পর্যায়ে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির প্রায় ২০ কোটি বইয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে চতুর্থ, পঞ্চম ও নবম-দশম শ্রেণির বইয়ের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় মুদ্রণ শুরু করতে সমস্যায় পড়ছেন প্রেস মালিকরা। তারা জানিয়েছেন, ইন্সপেকশন এজেন্টের রিপোর্ট ছাড়া বিল পাওয়া যায় না, ফলে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।
সমস্যা সমাধানে এনসিটিবির উদ্যোগ
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)র চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, “এবার সাড়ে ছয় কোটি বই বেশি ছাপতে হচ্ছে। মানের দিক থেকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। সময় কম থাকলেও আমাদের মনিটরিং টিম কাগজ পরীক্ষা করে কাজ শুরু করবে।”
তবে বই মুদ্রণের জন্য সময় স্বল্পতার কারণে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। প্রেস মালিকদের দেয়া সময় ৭০ দিন থেকে কমিয়ে এবার মাত্র ৪০ দিন করা হয়েছে। ফলে নতুন বছর ২০২৫ সালে সময়মতো সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এদিকে আগামী ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি বই উৎসব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। রবিবার( ৮ ডিসেম্বর) খুলনা বিভাগের বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় বলেন, এ বছর ১ জানুয়ারি হচ্ছে না বই উৎসব। তবে জানুয়ারি মাসের মধ্যে সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। প্রতিটি শ্রেণির বইয়ের কিছু অধ্যায় পরিমার্জন ও পরিবর্তন করার কারণে বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে। সে জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে কিছুটা বিলম্ব হবে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু হবে, যা আগামী বছরই প্রকল্প আকারে চালু হচ্ছে।
বিএনএনিউজ২৪, এসজিএন