বাণিজ্য ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বছরে বাংলাদেশের ৩০০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য ৪০ কোটি ডলারের বা চার হাজার ৩৯৩ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
গতকাল শুক্রবার ম্যানিলাভিত্তিক সংস্থাটির বোর্ডে এই ঋণ অনুমোদিত হয়েছে। এডিবির ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০২৩-২০৫০ বাস্তবায়নে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এটি মূলত একটি পলিসিভিত্তিক ঋণ।
এডিবির ঢাকা কার্যালয় জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। এ জন্য বার্ষিক গড় ক্ষতি প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার।
এই ঋণের অর্থে জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচির নির্দেশক প্রথম উপকর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে তার জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করতে, একটি কম কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং মূলধারায় লিঙ্গ সমতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করবে।
এডিবির প্রিন্সিপাল পাবলিক ম্যানেজমেন্ট ইকোনমিস্ট আমিনুর রহমান বলেন, জলবায়ুর ধাক্কা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। জলবায়ুসংক্রান্ত ক্ষতি কমাতে এ বিষয়ে কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এডিবি এই অঞ্চলের জলবায়ু ব্যাংক হিসেবে তার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচি জলবায়ু অর্থায়নকে একীভূত করতে একটি সক্ষম প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত পরিবেশ তৈরি করবে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এজেন্ডায় জলবায়ু কর্মকাণ্ডকে অগ্রাধিকার দেবে এবং কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবহন ও অবকাঠামো, নগর উন্নয়ন, জ্বালানিসহ জলবায়ু-সমালোচনামূলক খাতে সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করবে।’
সেক্টরাল পর্যায়ে প্রগ্রামটি স্মার্ট জলবায়ু ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপক কৃষিচর্চাকে উৎসাহিত করে। বিশেষ করে যেগুলো নারী কৃষকদের পক্ষে সৌর সেচ পাম্পগুলোর অভিযোজন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো নকশা ও পরিকল্পনা প্রবর্তন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের অভিযোজনের জন্য নিয়ন্ত্রক কাঠামো ও গণপরিবহন বহরে বৈদ্যুতিক বাসের প্রবর্তন করে।
এডিবি জানায়, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০) বাস্তবায়ন ও জলবায়ুকেন্দ্রিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অর্জনে এই ঋণ অবদান রাখবে। এ ঋণের অর্থে জলবায়ু-টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রথম উপপ্রগ্রাম বাস্তবায়ন হবে, যা বাংলাদেশকে জলবায়ু মোকাবেলায় শক্তিশালী করতে, কম কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে সহায়তা করবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং মূলধারায় লিঙ্গ সমতা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করবে।
সংস্থাটি জানায়, এই কর্মসূচি সরকারকে কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবহন ও অবকাঠামো, নগর উন্নয়নসহ জলবায়ু-সমালোচনামূলক খাতে সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। জলবায়ু অর্থায়নকে এক করার জন্য একটি সক্ষম প্রাতিষ্ঠানিক এবং নীতিগত পরিবেশ তৈরি করবে।
২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ৫৫০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এডিবি। এই অর্থের অর্ধেকই থাকছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়।
এডিবি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় সব প্রধান খাতেই সহায়তা দিয়ে থাকে। এর আগেও কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ, অবকাঠামো, জ্বালানি, পরিবহন, শিক্ষা, পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতে তারা বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এ বছরের জুনেও বাংলাদেশের জন্য ৪০ কোটি ডলার ঋণের অনুমোদন দেয় এডিবি।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ