চট্টগ্রাম: ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) চট্টগ্রাম এর আয়োজনে আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় হ্রাসে করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তাগণ চট্টগ্রাম নগরীর বিপর্যয় হ্রাসে সিডিএর কোন নির্দিষ্ট প্ল্যান নেই। নেই প্ল্যান কর্ণফুলী বা হালদা নদী শাসনেরও।
ধরা চট্টগ্রামের সদস্য সচিব, বিশিষ্ট কবি, লেখক, ও মাসিক প্রাণপ্রকৃতি সম্পাদক শারুদ নিজামের সঞ্চালনায় ও ধরা চট্টগ্রামের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল এর জেলা ৩১৫-বি৪ এর লায়ন্স জেলা গর্ভনর লায়ন কোহিনূর কামাল এমজেএফ’র সভাপতিত্বে ৯ অক্টোবর,২০২৪ লা মেরিডিয়ান হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় ।
সভার প্রথমেই ধরা’র সদস্য সাংবাদিক শামসুদ্দিন ইলিয়াস বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর বিপর্যয় হ্রাসে সিডিএর কোন নির্দিষ্ট প্ল্যান নেই। কর্ণফুলী বা হালদা সহ ইত্যাদি নদী শাসনের ও রক্ষায় কোন নির্দিষ্ট প্ল্যানিং নেই। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে সৃষ্ট আবহাওয়া দুর্যোগ হতে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন উপায় নেই। ভাটির দেশ হিসেবে এত এত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ভাবে কোনরূপ ক্লাইমেট সম্পর্কিত সহায়তা পাচ্ছে না।
সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই এমন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো যোগ করেন, আমাদের ধরিত্রী রক্ষায় দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়নেই উত্তরণ হতে পারে। নিজ স্বার্থ পরিত্যাগ করে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশ ও দশের স্বার্থে কাজ করাটাই উত্তম বলে তিনি মনে করেন।
কবি ও লেখক মর্জিনা আখতার বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা কেমন তা আমরাই ভালো বলতে পারি। অক্টোবর এর এই তীব্র গরমের কথা উল্লেখ পূর্বক বলেন, নাতিশীতোষ্ণ এই দেশে এহেন গরম আগে ছিলোনা। এক্ষেত্রে নিজ স্বার্থ পরিত্যাগ করে দেশের জন্য চিন্তা করলেই সেই আগের প্রাকৃতিক নির্মল রূপে ফিরে যাওয়া সম্ভব। এখনকার আবহাওয়াকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় তাও একটা ভাবার বিষয়, গবেষণার বিষয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। নদী ভাঙ্গন থেকে, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় সে বিষয়ে নাগরিক দায়িত্ব কর্তব্য এবং আন্তর্জাতিক ভাবে এর সমাধান বের করা যায় সেই বিষয়ে তিনি দৃষ্টিপাত করা উপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাবেয়া আকতার শিমুল বলেন, বিপর্যয় হ্রাস করণে সবার একতাবদ্ধ প্রচেষ্টাই সফলতা সম্ভব। ম. আনিসুর রহমান বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য স্বার্থবাদী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই দায়ী। বিপর্যয় এড়াতে শিল্প কারখানাগুলোর জন্য আলাদা পরিবেশের গুরুত্ব অনেক। উন্নয়ন এমন হওয়া উচিত যেখানে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ের মানুষ সেই উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারে।
শাফায়াত নুপুর বলেন, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা থেকে আন্তর্জাতিক ভাবে দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় সহ নিজ দেশের নাগরিকদের দায়িত্ব কর্তব্য পালনে জোর দেয়া উচিত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে, দেশীয় কারখানাগুলোর সুয়ারেজ সস্টেম সহ যাবতীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা শক্তপোক্ত করা ও কার্যকর করার দিকে নজর দেয়া উচিত। বিপর্যয় হ্রাসের কথা আসলে আশার থেকে হতাশাই বেশি আসে হৃদয়ে। কিছুদিন পূর্বের বন্যায় যে বিপর্যয় হলো তা অবর্ণনীয় কষ্ট ও দুঃখ দিয়ে গেছে।
সৈয়দ আহমেদ বাদল আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, নতুন সরকারের নিকট আমাদের চাওয়ার অন্যতম একটি বিষয় হবে পলিথিন ব্যবহার হ্রাস করা। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য।বিশিষ্ট সংগঠক এম এ সবুর সাহেব বলেন, শিশুকাল থেকেই যদি পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বাড়ানো যায় তবে তা উল্লেখিত সাফল্য বয়ে আনবে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার কমানো এবং যথাযথ সংরক্ষণের বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টার সাথে ধরার একটি মতবিনিময় এর আবেদন জানান। যুবাদের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি কর্মসভার আয়োজনের অনুরোধ জানান।
সাবেক কাউন্সিলর ও পরিবেশ সংগঠক এডভোকেট রেহানা বেগম রানু জলাবদ্ধতা, পয়নিষ্কাশন, পুকুর ভরাট, নদী ও খাল দখল হ্রাস করনে আমার পুকুর আমার নদী শিরোনামে একটা লিখিত সুপারিশ নামা পেশ করেন।
চবি অধ্যাপক ডঃ ইকবাল সারোয়ার বলেন, যদি সমস্যার কারন জানা যায় তবে সমস্যা সমাধান সম্ভব। তিনি প্লাস্টিক এর সাথে মাইক্রোপ্লাস্টিক যা পরিবেশের জন্য এবং মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর সে বিষয়ে সচেতনতার জোর দাবি জানান। পরিবেশ বিষয়ক কথা বলতে গিয়ে চট্টগ্রাম নিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম এর জলাবদ্ধতা পাহাড় ধ্বস সহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে সঠিক ডাটাবেজ ই পারে এর সমাধান বের করতে।পরিবেশ বিষয়ক যেকোন কাজে তিনি সাপোর্ট দিবেন বলে সম্মতি প্রকাশ করেন।
সারোয়ার আমিন বাবু বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রাকৃতিক ভাবেই হয়ে থাকে। যার ভুক্তভোগী উপকূলীয় মানুষ সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে আমরা মানুষ ও অনেকাংশে দায়ী। এক্ষেত্রে উপকূলীয় এলাকায় নারকেল গাছ বেশি বেশি লাগালে তা দুর্যোগ রোধে অনেক কাজে আসবে। এতে করে সামাজিক বনায়ন ও হবে এবং সেইসাথে উপার্জনের পথ ও তৈরী হবে। এক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ের ভূমিকা নগণ্য। তাই কারো দিকে না তাকিয়ে নিজেদের মতো করে সামাজিক পর্যায়ে গণসচেতনতা তৈরী করে কাজ করার আহবান জানান।
মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী পরিবেশ বিপর্যয় হ্রাসে আগামীর ভবিষ্যৎ তারুণ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই তারুণ্য যদি পলিথিন, প্লাস্টিক ব্যবহার এ সচেতনতা অবলম্বন করে তবে তা সুন্দর আগামি এনে দেবে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে তারুণ্য শক্তি ও এর সঠিক ব্যবহারই হোক আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার প্রতিপাদ্য।সভায় তারুণ্যের করনীয় শীর্ষক আলোচনা হতে তরুণদের থেকে মতামত নেয়া হয়।
এছাড়াও সভায় সাঈদ মিল্কী, আবদুল্লাহ আল মামুন,আরিয়ান আক্তার,আসিফ মাহমুদ, সাইদুর রহমান, ডাঃ শোভন দাশ,অভি কিম্বেল ,মোঃ ফরমান উল্লাহ,মুশফিরাত আহমেদ, হায়দার আজম,ইয়াসিন আরাফাত সহ স্বেচ্ছাসেবকরা উপস্থিত ছিলেন ।
বিএনএ,এসজিএন