30 C
আবহাওয়া
১:৪৪ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » এক নজরে কর্মবীর আকবর আলি খান

এক নজরে কর্মবীর আকবর আলি খান

আকবর আলি

বিএনএ, ডেস্ক: ড. আকবর আলি খান। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, ছিলেন একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন সাবেক উপদেষ্টা হিসেবে নতুন প্রজন্ম তাঁকে একটু বেশি চেনে। সবকিছু থেকে অবসরে যাওয়ার পর হয়েছেন একজন পূর্ণকালীন লেখক। ১৯৪৪ সালে জন্ম নেওয়া এই মানুষটির জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

আকবর আলী খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইতিহাস, কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি। পিএইচডি গবেষণাও অর্থনীতিতে। আমলা হিসেবে পেশাজীবনের প্রধান ধারার পাশাপাশি চলেছে শিক্ষকতাও। অবসর নিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে। এরপর দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন, দায়িত্ব পালন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে পদত্যাগ করে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন।

লিখেছেন একাধিক পাঠক সমাদৃত বই। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, সাহিত্য বিচিত্র বিষয়ে তার গবেষণামূলক বইও লিখেছেন আকবর আলী খান।

আকবর আলি খান ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার পুরো স্কুল জীবন পার করেন ধানমন্ডি গভ: বয়েজ হাই স্কুলে। পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬১ সালে আইএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান ১৯৬৪ সালে সম্মান ও ১৯৬৫ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন দুটিতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে।

সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে তিনি কিছু সময়ের জন্য শিক্ষকতা করেন।

১৯৬৭-৬৮ সালে তিনি লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৭০ সালে হবিগঞ্জ মহুকুমার এস. ডি. ও. হিসেবে পদস্থ হন। তিনি তার এলাকায় সুষ্ঠুভাবে ১৯৭০-এর নির্বাচন পরিচালনা করেন। যুদ্ধকালীন সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সাথে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সরকার অনুপস্থিতিতে তার বিচার করে এবং ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।

যুদ্ধ শুরুর আগের অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সমর্থন দেন। পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে হবিগঞ্জ পুলিশের অস্ত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করেন।

মুজিবনগর সরকার তখনও প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মচারীই লিখিত অনুমতি ছাড়া অস্ত্র যোগান দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে আকবর আলি খান নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, খাদ্য ও অর্থ যোগান দেওয়ার আদেশ প্রদান করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌঁছে দেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য যোগান দেবার জন্য গুদামঘর খুলে দেন এবং পরবর্তী সময়ে আগরতলায় চলে যান।

আগরতলায় যাওয়ার পর সহযোগীদের নিয়ে তিনি একটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন যার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা এবং একই সঙ্গে উদ্বাস্তু শিবিরে যারা আশ্রয় নিয়েছিল সেই শরণার্থীদের সহায়তা করা। প্রথম দিকে তাদের প্রচেষ্টা ছিল স্বনির্ভর।

এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়া পর মে মাসে তিনি যোগাযোগ শুরু করেন। জুলাই মাসে (১৯৭১) তাকে সরকারে যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতায় যেতে বলা হয় এবং সেখানে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ডেপুটি সেক্রেটারি বা উপসচিব হিসাবে পদস্থ হন। আগস্ট মাসে তাকে উপসচিব হিসাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত তিনি এই পদেই চাকরি করেছেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সচিবালয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। তিনি সেখানে ছয় মাস চাকরি করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান থেকে ফেরত ব্যক্তিদের চাকরি পেতে সহায়তা করেন। পরে তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।

১৯৭৩ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতায় যোগদানের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দিলেও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তাঁকে অবসর না দিয়ে শিক্ষকতা করার জন্য ছুটি দেওয়া হয়।

কমনওয়েলথ বৃত্তির জন্য মনোনীত হওয়ার আগে তিনি অল্প সময়ের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বৃত্তির জন্য তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং সেখানে অর্থনীতি বিভাগে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭৯ সালে দেশে ফেরত আসার পরে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তাকে আবারো প্রশাসনের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

১৯৮৪ সালে তিনি সাভারের বিপিএটিসি-তে মেম্বার ডাইরেক্টিং স্টাফ (এমডিএস) হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৮৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ে কাজ করেন।

আকবর আলি খান ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসে মিনিস্টার (ইকনমিক) পদে যোগ দেন। ঢাকায় ফিরে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদে যোগ দেন। তার সময়ে তিনি বিসিসিএল ব্যাংকের পূনর্গঠন এবং বেসিক ব্যাংক অধিগ্রহণের কাজ করেন। অল্প সময়ের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে কাজ করে তিনি ১৯৯৩ এ সরকারের সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি অর্থ সচিব হিসেবে পদস্থ হন। ২০০১ সালে তিনি বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে বিকল্প কার্যনির্বাহী পরিচালক (অল্টারনেটিভ এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর) পদে যোগদান করেন। বিশ্বব্যাংকে তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।

২০০৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন। পরবর্তী সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কায় তিনি তিনজন উপদেষ্টার সাথে একযোগে পদত্যাগ করেন। যা নিয়ে তখন সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।

বিএনএনিউজ২৪ / এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ