বিএনএ : নুরুল হক নুর। সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা তুলে দেওয়ার দাবিতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন করে সারাদেশে পরিচিতি পেয়েছিলেন। সেই সূত্রে হয়েছিলেন জনপ্রিয় ছাত্র নেতা। ডাকসু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়।
পরবর্তীতে ভিপি নুরুল হক নুর প্রথমে ছাত্র অধিকার পরিষদ পরে গণঅধিকার পরিষদ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তারই এক অনুসারি নাহিদ ইসলাম। তিনি বিগত ডাকসু নির্বাচনে নুরুল হক নুরের প্যানেল থেকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কোটা প্রথা তুলে দেওয়ার দাবিতে চলমান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এর সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম। দীর্ঘ ৪ বছর পর সেই নাহিদ ইসলাম প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত বছরের শুরু থেকে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতায় গণঅধিকার পরিষদ নামের রাজনৈতিক দলটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নুরের অনুসারী হিসেবে পরিচিতদের একটি অংশ ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ গড়ে তোলেন। নাহিদ ইসলাম এই সংগঠনের সদস্য সচিব। শুধু নাহিদ নয়, নুরুল হক নুরের অনেক অনুসারি এখন কোটা পদ্ধতি বাতিলের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত।
এছাড়াও বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, ছাত্র ফেডারেশন ও ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতাকর্মী সক্রিয় রয়েছে।
অঘোষিতভাবে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যানারে আছে, জামায়াত ইসলামীর সহযোগী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরও।
মূলত: অরাজনৈতিক ব্যানারে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন গুলোই কোটা বিরোধী আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তারা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে সমর্থ হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এই মূর্হুতে পেনশন স্কিম আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র সদস্য সচিব নাহিদ ইসলাম বলেন, এই আন্দোলন একটা ওপেন প্ল্যাটফর্ম। সবাই এখানে যুক্ত হচ্ছে, হবে। আমাদের আন্দোলনে অনেকে আছে, যাদের কেউ কেউ ছাত্রলীগের রাজনীতিও করেছেন। চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের জন্য ‘ওপেন প্ল্যাটফর্ম’-এর মাধ্যমে দাবি জানাচ্ছি আমরা।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সাবেক ও গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নেতা নুরুল হক নুর বলেন, ‘এখন যারা কোটা প্রথা তুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে, ২০১৮ সালে তাদের অনেকেই প্রথম, দ্বিতীয় বর্ষে পড়তো। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে যেখানে সরকার কোটা প্রথা তুলে দিলো, তা ফিরিয়ে আনায় আবারও শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এসেছে। দলমত নির্বিশেষে তরুণরা মাঠে নেমে এসেছে। আমরা যেহেতু রাজনৈতিক দল করেছি, তাই সরাসরি না থেকে যারা কাজ করছে তাদের সমর্থনে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
নুর বলেন, অনেকে দল করেছে, কিন্তু তরুণরা নেই। তরুণদের কানেক্ট করতে পারছে না। যেটা ছাত্র অধিকার পরিষদ, গণঅধিকার পরিষদ করতে সক্ষম হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির মতো ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন ও ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতাকর্মীও রয়েছেন আন্দোলনে। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, কোটা প্রথাবিরোধী আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই মনোভাবকে সম্মান জানিয়ে আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছে।
ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব উমামা ফাতেমা বলেন,
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়েছিল তাতে মুক্তিযুদ্ধের গুটি কয়েক রাজনৈতিক বিরোধিতাকারী ও তাদের সংগঠন ছাড়া আর সবাই কোনও না কোনোভাবে ভূমিকা রেখেছেন। ফলে এই ভূমিকাকে নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষের গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখার প্রচেষ্টা মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের অংশগ্রহণকে অস্বীকার করার শামিল। তার দাবি, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে।
প্রবাদ আছে, ঘর পোড়ার মধ্যে আলু পোড়া! বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের স্ব স্ব দলের পক্ষ থেকে ছাত্র-শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। সমর্থন জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল। তারা ছাত্র শিক্ষকদের আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের দিকে নিয়ে যেতে তৎপর রয়েছে।
এই অবস্থায় ৯ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও পেনশন স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন সরকার সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
বিএনএনিউজ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচ.এম/এইচমুন্নী