25 C
আবহাওয়া
৫:১৯ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮৮ (যশোর-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮৮ (যশোর-৪)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০  ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্ঠা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে যশোর-৪ আসনের হালচাল।

যশোর-৪ আসন

যশোর-৪ আসনটি বাঘারপাড়া, অভয়নগর এবং যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৮৮ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শাহ হাদিউজ্জামান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৪ শত ৬৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৬ শত ৩৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহ হাদিউজ্জামান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নজরুল ইসলাম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৫ শত ৯০ ভোট।

৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নজরুল ইসলামকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির নজরুল ইসলামকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শাহ হাদিউজ্জামান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৫ শত ৬৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহ হাদিউজ্জামান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ১ শত ৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির এমএম আমিন উদ্দিন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ২ শত ৬৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির এমএম আমিন উদ্দিন বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৩ শত ৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৩৪ জন। নির্বাচনে ৪দলীয় জোটের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির এমএম আমিন উদ্দিন বিজয়ী হন। ধানের প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৬ হাজার ৫ শত ৪০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের শাহ হাদিউজ্জামান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১ হাজার ৯ শত ৯৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায় বিজয়ী হন
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২২ হাজার ৩ শত ৩৮ জন জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫ হাজার ৫ শত ৮৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায় বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২ হাজার ২ শত ৫৮ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির টিএস আইয়ুব ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ৯ শত ৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায় বিজয়ী 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪০ হাজার ২ শত ৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৩ হাজার ২ শত ২২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায় বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৯ শত ৪২ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল ওহাব। কলস প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩৬ হাজার ২ শত ৮০ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায় বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০  ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯ শত ৯১ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩শত ৩৮ জন।

একাদশ জাতীয় সংসদে যশোর-৪ আসেন প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায়, বিএনপির টি এস আইয়ুব, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির জহুরুল হক, কাঠাল প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির এম শাব্বির আহমেদ, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির লিটন মোল্ল্যা, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস্‌ পার্টির মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ,কুলা প্রতীকে বিকল্প ধারার নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের নাজমুল হুদা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায় বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৭৩ হাজার ২ শত ৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির টি.এস আয়ুব । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩০ হাজার ৮ শত ৭৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, যশোর-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ, ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি এবং অষ্টম সংসদে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর যশোর-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্ঠা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭০.৩১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.২৪%, বিএনপি ২২.৭৮%, জাতীয় পার্টি ১৬.৭০% জামায়াত ইসলামী ১৬.০০ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১০.২৮% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.৯১%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.৩১%, বিএনপি ২২.৮৯%, জাতীয় পাটি ২৩.২৩% জামায়াত ইসলামী ১৩.১৮ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৩৯% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.২৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.৪৯%, ৪দলীয় জোট ৫২.৭২%, জাতীয় পার্টি ৪.৩২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৭% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯১.৯১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫০.২৭%, ৪ দলীয় জোট ৪৭.৬২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২.১১% ভোট পায়।

বাঘারপাড়া, অভয়নগর এবং যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত যশোর -৪ সংসদীয় আসনে ২০০৮ সাল থেকে সংসদ সদস্য বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিত কুমার রায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন।

আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক বিপুল ফারাজী। অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর, ডাক্তার নিকুঞ্জ বিহারী রায়, বাঘারপাড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার অধিকারী।

বিএনপি আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বেশ কয়েকজন নেতা দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইউব, অভয়নগর থানা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফারাজী মতিয়ার রহমান।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী এম সাব্বির আহমেদ, বাঘারপাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক এড. জহিরুল হক।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, যশোর-৪ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ। কিন্তু আওয়ামী লীগে রয়েছে চরম অন্ত কোন্দল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। যা নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। তেমন কোন্দলও নেই। বিএনপি চাইবে ।আওয়ামী লীগকে হঠাতে আর আওয়ামী লীগ চাইবে ধারাবাহিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৮৮তম যশোর ৪ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি ,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ