বিএনএ,বরিশাল: বরিশাল সিটি নির্বাচনে আইন অনুযায়ী দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রচার প্রচারণা করার কথা থাকলেও কিন্তু কে শোনে কার কথা। রাত ১২টার সময়ও প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগ অব্যাহত থাকে,মাইকে গান বন্ধ হয় না।
রোববার (৪ জুন) রাতে গণসংযোগকালে এক পুলিশ সদস্যের সাথে হাতপাখা প্রার্থীর তর্ক-বিতর্ক হয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীমের বাগবিতণ্ডা হয়। যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েও পড়েছে।
এদিকে লাঙ্গল ও হাতপাখা মার্কার দুই প্রার্থীর প্রচারণায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড স্পিকার ব্যবহার করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি চলছে নির্বাচনি গান-বাজনাও।
এমন প্রচারকে আচরণবিধির লঙ্ঘন মনে করা হলেও লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেছেন, আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘন না হয়, সেদিকে আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নজর রাখছে। তবে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে গেছেন। একারণে জনগণের কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। আমরা বিষয়টি আরও সচেতনভাবে দেখবো।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রার্থীরা যে যাই বলুক, প্রচারের সময় নিয়মনীতির ধার ধারছেন না কেউ। আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন শব্দযন্ত্র। এতে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, বাজার ও পাড়া মহল্লায় সবখানেই অবাধে ব্যবহৃত শব্দযন্ত্রের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। বেশি বিপাকে পড়েছে স্কুলের শিক্ষার্থী ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-তে বলা হয়েছে, মাইক্রোফোন ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা-নিষেধে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনও রাজনৈতিক দল, অন্য কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান একটি ওয়ার্ডে পথসভা বা নির্বাচনী প্রচারের কাজে একাধিক মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্য কোনো যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনও নির্বাচনী এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা-বর্ধনকারী যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর ২টার আগে এবং রাত ৮টার পরে করা যাবে না।’
কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, প্রার্থীরা রিকশা ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় মাইক লাগিয়ে প্রচারণামূলক গান ও স্লোগান উচ্চশব্দে প্রচার করছেন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১২টার পরও প্রার্থীদের এসব মাইক নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে বাজতে থাকে। কেউ কেউ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড-স্পিকারও ব্যবহার করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪ থেকে ৫ জন প্রার্থী রয়েছেন এবং প্রত্যেক কাউন্সিলর প্রার্থী কমপক্ষে দু’টি (কেউ আরো বেশি) মাইক ব্যবহার করছেন। স্কুল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এমনটি হাসপাতাল এলাকায়ও এই প্রচার চালানো হচ্ছে। তারা নিজেদের স্বার্থের বাইরে কেউ কিছু ভাবছে না।
আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ১১৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ১০টি পদে ৪২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সরেজমিন প্রার্থীদের প্রত্যেককে দুই থেকে চারটি পর্যন্ত মাইক ব্যবহারের করতে দেখা গেছে।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফারজানা আক্তার বলেন, তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ে সবাই অতিষ্ঠ। এর মধ্যে একটু পর পর উচ্চ শব্দে একেকবার একেক প্রার্থীর মাইক বাজে। ছোট মাইকের পাশাপাশি সাউন্ড স্পিকারের মাধ্যমেও গান বাজিয়ে প্রার্থীরা প্রচার করছেন। সামনে বাচ্চাদের পরীক্ষা। তাদের পড়াশোনায়ও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।’
প্রার্থীদের এমন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে নগরীর সাগরদি ধানগবেষণা এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘প্রার্থীদের মাইকের শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে পড়ে। দিন-রাত সব সময়ই তারা প্রচার করছেন। গভীর রাতেও মাইকের শব্দে ঘুমানো যায় না। ছেলের এসএসসি পরীক্ষা চলছে। তার পড়াশোনায় অনেক সমস্যা হচ্ছে।’
নৌকা মার্কার মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের নিবার্চন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, নির্বাচন একটি উৎসব। ভোটাররা আনন্দের সঙ্গে প্রচার করছেন। আমরা আচরণবিধি মেনেই কাজ করছি। নির্ধারিত সময়ের পরে কোথাও যাতে কোনও ধরনের প্রচার না থাকে, সেজন্য আমাদের নির্বাচনি কমিটিকে বলে দিয়েছি।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট লিংকন বাইন বলেন, ‘নির্বাচনের সময় মাইকের ব্যবহার সম্পর্কে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন রয়েছে। সেটা পুলিশ ও কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে হবে। কিন্তু আইনটি কেউই মানছেন না। যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো আইনের ব্যবহার করতো, তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সহজ।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করছেন। তারপরও কোথাও কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেবো।
বিএনএ/ সাইয়েদ কাজল, ওজি