30 C
আবহাওয়া
১০:২০ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড: মেজবানি খাইয়ে, টাকা দিয়ে  শিক্ষার্থীদের মিছিল করালেন!

চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড: মেজবানি খাইয়ে, টাকা দিয়ে  শিক্ষার্থীদের মিছিল করালেন!

চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড

বিএনএ,চট্টগ্রাম: বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানের প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পণ্ড করতে মেজবানি ও  টাকার বিনিময়ে পটিয়া থেকে শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রামে এনেছেন জাতীয় সংসদদের হুইপ। বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এলাকায় এসব শিক্ষার্থীদের বাস- ট্রাকে করে আনা হয়।  আগত শিক্ষার্থী ও হুইপ সামশুল হকের সমর্থকরা এ সময়  বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি’র বিরুদ্ধে মিছিল ও সমাবেশ করে।
চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড

সরেজমিনে দেখা যায়,  চট্টগ্রাম নগরীর নগরের জামালখান মোড়ে বাস, মাইক্রোবাস যোগে জড়ো হতে থাকেন হুইপের ভাড়া করা লোকজন। এসময় স্কুল শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল সামশুল হক চৌধুরীর নাম সম্বলিত প্লেকার্ড ও ব্যানার। তবে মিছিল নিয়ে তারা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে চাইলে পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়।
চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড

চট্টগ্রামে আসা শিক্ষার্থীরা বিএনএ’কে জানিয়েছে, স্কুল শিক্ষার্থীদের বাসে ও মাইক্রোবাসে পটিয়া থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে আনা হয়। তাদের দেয়া হয় মাথাপিছু ১ হাজার টাকা। এ ছাড়া আসা-যাওয়ার জন্য গাড়ি, দুপুরের খাবার এবং বিকেলের নাশতার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পটিয়া ইন্দ্রপোল এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করানো হয়। সেখান থেকে বাসে করে আমাদের শহরে নিয়ে এসেছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়,  ‘‌‌আমাদের স্কুল বন্ধ, তাই সমাবেশের নাম করে শহর দেখতে আসলাম। এক বড় ভাইয়ের কথায় আমি সভায় এসেছি’।
চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড

উল্লেখ, টানা ১৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। মাদকাসক্ত ও কিশোর গ্যাংয়ের মত অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা।  তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে হুইপ সামশুল হক তার তার অনুসারি পটিয়া আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা একটি বিশেষ মহলে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড

অনুসন্ধানে জানা যায়, হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান হাফেজ ও যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম জসিমের নেতৃত্বে তিনটি বাস, সুচক্রদণ্ডী ও খান মোহনা এলাকা থেকে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে তিনটি বাস, পটিয়া পৌরসভার মাজারঘাটা এলাকা থেকে কাউন্সিলর গোফরান রানার নেতৃত্বে তিনটি বাস, পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনের নেতৃত্বে একাধিক মাইক্রোবাস ও বাস আসে।
চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড

এদিকে বুধবার সকাল থেকে এসএস খালেদ সড়কের রীমা কমিউনিটি সেন্টার হয়ে জামালখান মোড় পর্যন্ত পুরো এলাকা দখলে ছিল হুইপের অনুসারী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম পরিষদ পটিয়া নেতাকর্মীদের। তারা হুইপের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। তবে ওই কর্মসূচিতে হাজার হাজার লোক সমাগমন হওয়ায় এটি সমাবেশে পরিণত হয়।
চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া এবং তার সাথে কিছু দালাল একত্রিত হয়ে হুইপ শামসুল হকের পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত রয়েছে। হুইপ সামশুল হক চৌধুরী কোনো সাধারণ মানুষ না। তিনি পটিয়ার গণমানুষের নেতা। পটিয়াবাসী এ ষড়যন্ত্র কখনো মেনে নেবে না। এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

বক্তারা আরও বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট ও মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করে তার সুনাম সুখ্যাতি নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটা কোনো দিনই সফল হবে না। তার পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের জনগণ আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহের ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আ ফ ম শামসুজ্জমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ডা. তিমির বরণ চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি নূর হাকিম, আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এম.এ রহিম প্রমুখ।

অন্যদিকে, একই সময় ও স্থানে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দীন আহমদকে হুইপ পুত্র শারুন ও হুইপের ভাই নবাবের হুমকির প্রতিবাদে সমাবেশ ডেকেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পরিষদ। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বিকেল ৩টায় এ সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশি বাধায় পূর্ব নির্ধারিত স্থানে সমাবেশটি হতে পারেনি। তবে পৃথক পৃথক পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা হয়। প্রেসক্লাব নিকটস্থ চেরাগী পাহাড়, ডিসি হিল সড়ক হয়ে ওয়াসা পল্টন রোডে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা জনতা রাস্তায় নামেন। তারা মুহুর্মুহু স্লোগানে মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছনার প্রতিবাদে হুইপ শামসুল ও তার পুত্র শারুন ও ভাই নবাবের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে মিছিল সহকারে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সাবেক মন্ত্রী মরহুম জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা সমাবেশ করেন।
চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড

সমাবেশ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তার পুত্র এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদের পতাকা এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা, কোনটিই এই হুইপ ও তার পরিবারের কারো কাছে নিরাপদ নয়’ বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন মুক্তিযোদ্ধা-জনতা।

সমাবেশে হুইপের ভাই নবাবের হুমকি পাওয়া অশীতিপর মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা দুর্নীতিবাজ হুইপের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছি। ইয়াবা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছি। লুটেরার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছি।’

মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবু তৈয়ব বলেন, ‘পটিয়ার এমপি হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ও তার পুত্র এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে লুটপাট ও প্রতাপের প্রতিবাদে এবং মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছনার নিন্দায় মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মাঠে নেমেছেন। দোষীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই সংগ্রাম শেষ হবে না। একজন মুক্তিযোদ্ধা নিপীড়নকারীর কাছে কখনোই জাতীয় সংসদের পতাকা নিরাপদ নয়, জাতীয় পতাকাও নিরাপদ নয়। বঙ্গবন্ধুর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও নিরাপদ নয়।
চট্টগ্রামে হুইপ কান্ড

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ ও মিছিলে দেখা যায় হুইপ এবং হুইপ পুত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের প্লেকার্ড। একটি পে-কার্ডে  দেখা যায়, ‘‌‌বাপ করেছে মেশিন চুরি, পোলা সুদখোর; সংসদটা পবিত্র করো, আনো নতুন ভোর’! আরেকটি পে-কার্ডে দেখা যায়, ‘‌বাপ করে মেশিন চুরি, পোলা মদের গেলাসে; পটিয়াবাসীর শত দুঃখে বাপ-বেটা হাসে’!

বিএনএ/ মনির/ ওয়াই এইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ