২৫ বছর আগে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আবদুল আজিজ, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাঁরা তিনজনই পলাতক। বাকি ছয় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এই রায় ঘোষণা করেন।
আইনজীবী ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মামলার অভিযুক্ত ৯ আসামির মধ্যে পাঁচজন পলাতক। তাঁরা হলেন, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আবদুল আজিজ, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন ও আদনান সিদ্দিকী। এ ছাড়া আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী জামিনে আছেন। আর কারাগারে আছেন সানজিদুল ইসলাম ইমন।
মামলার কাগজপত্রে দেখা যায়, ১৯৯৮ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)র তদন্তে উঠে আসে আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধের জেরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়।
খুন হওয়ার পরের বছর ১৯৯৯ সালে আশীষ রায় চৌধুরীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর দুই বছর পর ২০০১ সালে বিচার শুরুর আদেশ হয়। ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে এক আসামি উচ্চ আদালতে গেলে আটকে যায় বিচার কার্যক্রম। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে আবার বিচার কার্যক্রম ২০২২ সালে শুরু হয়
এ দিকে ১৭ বছর আগে ঢাকা মহানগরের পিপির দপ্তর থেকে সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার তদন্তের নথিপত্র নিয়ে যান পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন। আদালতের নির্দেশের পরও তিনি তা আদালতে উপস্থাপন করেননি।
প্রসঙ্গত ট্রাম্প ক্লাবের কার্যক্রম চলত বনানীর আবেদিন টাওয়ারের সপ্তম তলায়। ক্লাবের পশ্চিম পাশে ছিল একটি জামে মসজিদ। ওই ক্লাবে নাচ-গানসহ অসামাজিক কার্যক্রম চলত। ক্লাবের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে স্থানীয় মুসল্লিদের পক্ষে অবস্থান নেন সোহেল চৌধুরী।
১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই রাতে বনানীর ট্রাম্প ক্লাবে গান বন্ধ করতে বলেছিলেন সোহেল ও তাঁর বন্ধুরা। গান বন্ধ করা নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেলের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সোহেল চৌধুরী আজিজের ওপর খেপে যান। তখন সোহেলের বন্ধু কালা নাসির আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গুলি করতে যান। এ সময় ক্লাবের বাথরুমে ঢুকে আত্মরক্ষা করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। এই ট্রাম্প ক্লাবের মালিকানা ছিল বান্টি ও আশীষের। বিরোধের শুরু এখান থেকেই।
২৪ জুলাইয়ের পার্টিতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর ঝামেলার পর থেকে তাঁর ওপর ট্রাম্প ক্লাবে ঢোকায় অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আসে।
ঘটনার দিন ১৯৯৮ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর সোহেল চৌধুরী ক্লাবে ঢুকতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁকে ক্লাবে ঢোকার অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাত তিনটার দিকে সোহেল চৌধুরী আবার ক্লাবের সামনে আসেন। তখন পেশাদার খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী