35 C
আবহাওয়া
১২:০৮ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সিইউএফএল: বাসা বরাদ্দে অনিয়মই যেন নিয়ম !

সিইউএফএল: বাসা বরাদ্দে অনিয়মই যেন নিয়ম !


।।এনামুল হক নাবিদ।।

চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এর বাসা বরাদ্দে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যই যেন  নিয়ম। বাসা বরাদ্দের দায়িত্বে নিয়োজিত এস্টেট অফিসার ও কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক  যেন  সিইউএফএল কলোনীর রাজা- মহারাজা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) বিসিআইসির একটি প্রতিষ্ঠান। তবে এই প্রতিষ্ঠানের এস্টেট শাখা হয়ে উঠেছে অনিয়ম ও  ঘুষ বাণিজ্যের আঁতুড়ঘর।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিইউএফএলের কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিইউএফএল ও ডিএপিএফসিএল এর উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট।

চাহিদামত বাসার  জন্য আবেদন করে না পাওয়া কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিইউএফএল কলোনীর তাদের জন্য  বাসা পাওয়া যেন সোনার হরিণ। সেই কলোনীর বাসা সিইউএফএল শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের কপালে না  জুটলেও ডিএপিএফসিএল শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য বাসা পাওয়া যেন আবার  হাতের মোয়া। সিইউএফএল শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তারা চাহিদা মত বাসা না মিললেও ডিএপিএফসিএল শ্রমিক-কর্মচারীদের অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে সিইউএফএল কলোনীর বাসা  মিলে খুব সহজে। আর এই অনিয়মকে নিয়ম করে  বাসা বরাদ্দের মাধ্যমে  অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা  হাতিয়ে নিচ্ছে  সিইউএফএল ও ডিএপিএফসিএলের উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা।

সিইউএফএল বাসা বরাদ্দের অনিয়ম অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই অনিয়মের মূলে রয়েছে সিইউএফএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান,  উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আমিনুল হক ও ডিএপিএফসিএল ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহনাজ পারভীন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিইউএফএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান ও ডিএপিএফসিএল ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহনাজ পারভীন সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী।

ডিএপিএফসিএল সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি   ডিএপিএফসিএল মহা ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসেবে যোগদান করেন মিজানুর রহমান। পরে সেখানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি  সিইউএফএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। মিজানুর রহমানের ডিএফসিএল যোগদানের একই বছরে অর্থাৎ  ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি মিজানুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন ডিএপিএফসিএল ব্যবস্থাপক (প্রশাসন)  হিসেবে যোগদান করেন।

এ দিকে  বিসিআইসি সূত্র বলছে ২০২২ সালে (২০ নভেম্বর) বিসিআইসির চিফ অব পার্সোনাল মোহাম্মদ জাকির হোসেন (চলতি দায়িত্ব) স্বাক্ষরিত এক দপ্তরাদেশে সিইউএফএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল্লাহকে বদলির আদেশ দেয়া হয়।

ওই  সূত্রে আরো জানা যায়, সিইউএফএলের নতুন এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন রাঙ্গাদিয়া ডিএপিএফসিএলর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান।

এ দিকে সিইউএফএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান যোগদানের দুই দিন পর (২২ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে সিইউএফএলের প্রাইমারি রিফরমারি ওয়েস্টেস বয়লারে আগুন লাগে । দেখা গেছে, ২৩ ও ২৪ সালে দুই বছরে যান্ত্রিক ত্রুটি, গ্যাস সংকটসহ নানা কারণে  ৬ মাস কারখানা চালু রাখা না গেলেও  দেদারছে   লুটপাট হয়েছে  সিইউএফএলে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ও ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল) বিসিআইসির দুইটি প্রতিষ্ঠান।তবে এই প্রতিষ্ঠান গুলো  যেন একেকটি দুর্নীতির আখড়া। নিয়োগ বাণিজ্যে অনিয়ম, টাকা দিয়ে ক্যাজুয়াল নিয়োগ, যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় লুটপাট সমানে চলছে।

ডিএপিএফসিএল এস্টেট অফিস সূত্রে জানা যায়, ডিএপিএফসিএল কলোনীতে বাসা রয়েছে ৪৮টি।সিইউএফএল কলোনীতে বাসা হচ্ছে  প্রায় ৩০০টি(সিইউএফএল এস্টেট সূত্রে পাওয়া তথ্যে)। তবে স্কুল, কলেজ, হাসপতালসহ নানাবিধ সুবিধার জন্য ডিএপিএফসিএল’র শ্রমিক কর্মচারীরা অসাধু পন্থা অবলম্বন করে বাসা বরাদ্দ  নেয় সিইউএফএল কলোনীতে। এর ফলে সিইউএফএল শ্রমিক কর্মচারীরা চাহিদামত বাসা না পাওয়ায় তাদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের  মাঝে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

বাসা বরাদ্দের অনিয়ম অনুসন্ধানে বিভিন্ন বিষয় ওঠে আসে। তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে সিইউএফএল শ্রমিক-কর্মচারীরা বাসার আবেদন করেও চাহিদা মত বাসা পাচ্ছে না। সেখানে ডিএপিএফসিএল শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তারা ডিএপিএফসিএল ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহনাজ পারভীনের সুপারিশে চাহিদামত বাসা পাচ্ছে। অনুসন্ধান ওঠে আসে ডিএপিএফসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে সহ: প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলায়মানের কাছে আবেদন করা হয়। সেই আবেদন গুলো ডিএপিএফসিএল ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহনাজ পারভীনের ইশারায় সিইউএফএল ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে পাশ হয়ে  চলে যায় সিইউএফএল এস্টেট অফিসার আমিনুল হকের কাছে।  তার মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাসা প্রতি ৭০  থেকে  ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে সারা বছর চলে এই সিন্ডিকেট বাসা বরাদ্দ বাণিজ্য।   বাসা বরাদ্দে এই অনিয়মের স্বামী-স্ত্রী সিন্ডিকেট চক্রে মূলে রয়েছে সিইউএফএল এস্টেট অফিসার আমিনুল হক। তার ইশারা ইঙ্গিতে হয় সব কিছু।

দেখা যাচ্ছে এই সুপারিশ স্টাইলে ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর  একদিনে চারটি  বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়।  এই চারটি বাসা হলো এফ-৬/২ পারিবারিক বাসা (ঝুমুর আক্তার কলি), এফ-১/১ নং পারিবারিক বাসা (একেএম শওকত ওসমান হারুন), এফ-২/৪নং পারিবারিক বাসা (সজীব শেখ),  এফ-১/৪ নং পারিবারিক বাসা (ইসমাইল হোসেন রুবেল)।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক  একাধিক শ্রমিক কর্মচারী জানায়, এসব বাসা বরাদ্দে দেওয়ার সময় ৭০ থেকে ৮০হাজার টাকা করে ঘুষ নেয়া হয়েছে । ২০২৪ সালের ২২জানুয়ারি ডিএপিএফসিএল উৎপাদন বিভাগের এস ও-১  মেহেদী হাসান নামের এক শ্রমিক সিইউএফএল কলোনীতে বাসা বরাদ্দের আবেদন করে।  এই বাসা বরাদ্দের জন্য সিইউএফএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করে  ডিএপিএফসিএল  ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহনাজ পারভীন।

এদিকে সিইউএফএল বাসা বরাদ্দের নিয়ম গুলোর মধ্যে ৪নং নিয়মে উল্লেখ রয়েছে,সিইউএফএল হতে অন্যত্র বদলি/ মৃত্যু / চুড়ান্ত অবসর গ্রহণ করার পর কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতিক্রমে ৬০ দিন রাখার নিয়ম রয়েছে। এছাড়াও আরো নয়টি নিয়ম রয়েছে বাসা বরাদ্দ নেওয়ার  ক্ষেত্রে।  এ সব নিয়ম সিইউএফএলের শ্রমিক -কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের জন্য। তাহলে এই নিয়মে ডিএপিএফসিএল শ্রমিক কর্মচারীরা কিভাবে তাদের কলোনীতে বাসা না নিয়ে  সিইউএফএল কলোনীতে বাসা পায় এমন প্রশ্ন তুলেছে সিইউএফএল সচেতন শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তারা। মূলত এই বাসা বরাদ্দের  মূলে রয়েছে এই স্বামী স্ত্রী সিন্ডিকেটের অবৈধ লেনদেন।

সূত্র বলছে, এস্টেট শাখার ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতির অনিয়মের  তদন্ত কমিটিও হয়েছে। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ৫টি বিষয় নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব মো. নুরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে মন্ত্রণালয় তিন সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই তদন্ত কমিটির ১নং তদন্তের নথি ছিল সিইউএফএল কলোনীর বাসা বরাদ্দ, ভাড়া কর্তন এবং বাসা বরাদ্দের সংশ্লিষ্ট নথি নিয়ে ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ । তবে এই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন  আলোর মুখ কতখানি দেখেছে তা জানা না গেলেও বাসা বরাদ্দে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য  ঠিকই রয়েছে।

এসব বিষয়  নিয়ে কথা বলতে  ডিএপিএফসিএল ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহনাজ পারভীনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সংযোগ না পাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে বাসা বরাদ্দের এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে সিইউএফএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান বলেন, সিইউএফএলের কোন শ্রমিক কর্মচকরী কর্মকর্তা বাসা ছাড়া নাই। কলোনীতে কিছু বাসা খালি রয়েছে সেগুলোতে ডিএপিএফসিএল শ্রমিক কর্মচারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাসা গুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমরা বরাবরই সিইউএফএল কলোনীতে সিইউএফএল শ্রমিক কর্মচারীদের অগ্রধিকার দিয়ে থাকি। এমনকি বদলি হয়ে আসবে এমন শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তাদের জন্য অনেক বাসা খালি রেখে দেওয়া হয়।

এসব অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে সিইউএফএলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিসিআইসির পরিচালক (বাণিজ্যিক), যুগ্মসচিব শাহ্ মোমিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। পরে কল রিসিভ না করায় ক্ষুদে বার্তা পাঠনো হয়। তার কোন উত্তর না পাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বিএনএনিউজ২৪ডটকম 

Loading


শিরোনাম বিএনএ