বিএনএ, ঢাকা : ২০২০ সালে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৫ হাজার ৩৯৭ টি দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩১৭ জন নিহত এবং ৯হাজার ২১ জন আহত হয়েছে।যার মধ্যে ৪ হাজার ৮৯১ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৬৮৬ জন নিহত, ৮৬০০ জন আহত হয়েছে। রেলপথে ৩২৩ টি দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত, ৭৯ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১৮৩ টি দুর্ঘটনায় ৩১৩ জন নিহত, ৩৪২ জন আহত ও ৩৭১ জন নিখোঁজ হয়। শনিবার ( ৯ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
ওই সংগঠনের বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্র সমূহে প্রচারিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে দেখা গেছে , বিদায়ী ২০২০ সালে ৪৮৯১ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৬৮৬ জন নিহত হয়েছে এবং ৮৬০০ জন আহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ২০৩৯ জন চালক, ১৫৯৪ জন পথচারী, ৭৫৭ জন পরিবহণ শ্রমিক, ৭০৬ জন ছাত্র-ছাত্রী, ১০৪ জন শিক্ষক, ২০০ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯১৮ জন নারী, ৫৪১ জন শিশু, ২৯ জন সাংবাদিক, ২৭ জন চিকিৎসক, ০৮ জন আইনজীবী ও ০৫ জন প্রকৌশলী এবং ১৪৪ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ০৯ জন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় মিলেছে।
এর মধ্যে ১৩৯২ জন পথচারী, ১৫ জন সেনা সদস্য, ৫২ জন পুলিশ, ১৫ জন আনসার সদস্য, ০১ জন র্যাব সদস্য, ০২ জন বিজিবি সদস্য, ০১ জন সিআইডি সদস্য, ০১ জন নৌ-বাহিনীর সদস্য, ০১ জন বিমানবাহিনীর সদস্য ০৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ০৫ জন সাংবাদিক, ৬৫৬ জন নারী, ৪১৮ জন শিশু, ৩৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী, ৯২ জন শিক্ষক, ১৩৯০ জন চালক, ৩৫৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ০৪ জন প্রকৌশলী, ০১ জন আইনজীবী, ১১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ২৩ জন চিকিৎসক নিহত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ২২০ জন পঙ্গুত্ব বরণ করে।
উল্লেখিত সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৬৭৩৬ টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৩.১২ শতাংশ বাস, ২৮.৩৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৫.৪১ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৮.৫২ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ২৪.৮০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯.০৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ১০.৬৪ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫২.৯৬ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২.০৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৭.০৮ শতাংশ খাদে পড়ে, ৬.৭১ শতাংশ বিবিধ কারনে, ০.৩৪ শতাংশ চাকায় ওড়না পেছিয়ে এবং ০.৮১ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত যানবাহনের ৩.৭৬ শতাংশ মোটরসাইকেলে, ৩.৩২ শতাংশ নসিমন-মাহিন্দ্রা-লেগুনায়, ১.০৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইকে, ০.১৯ শতাংশ কার- জীপ-মাইক্রোবাসে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও ৫.৮৭ শতাংশ বাস, ১.৪২ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি, ০.৮৩ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা দুর্ঘটনা কমেছে।
পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে আরো দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় বিদায়ী ২০২০ সালে পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা ৩.৩৯ শতাংশ, বেপরোয়া গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হায়িয়ে খাদে পড়ার ঘটনা ০.৯৯ শতাংশ ও ট্রেন যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ০.১৬ শতাংশ কমলেও মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ৩.৭ শতাংশ বেড়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৮.৯৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৪.৬৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৯.১১ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৩৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ২.০৬ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৮১ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
বিগত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা ৬.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও জাতীয় মহাসড়কে ৩.৪৫ শতাংশ, রেলক্রসিং এ ০.১৬ শতাংশ, ফিডার রোডে ২.১৯ শতাংশ কমেছে।
বিএনএনিউজ/আমিন