বিএনএ, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে মামলার আবেদনটি করেছেন এনামুল হক নামে একজন। তিনি নিজেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মী বলে উল্লেখ করেন। তার বক্তব্য শুনে আবেদনটি আদেশের জন্য রেখেছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শামসুল আলম।
মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের একজন সমর্থক। গত ২৬ নভেম্বর জমি রেজিস্ট্রির কাজে আদালতে যান তিনি। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা ‘একটা দুইটা মুসলিম ধর, ধরে ধরে জবাই কর’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। বাদীর পরনে পাঞ্জাবি এবং টুপি থাকায় ‘মোল্লাকে জবাই কর’ বলে তার ওপর হামলা করেন চিন্ময়ের অনুসারীরা। হামলায় বাদী ডান হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং মাথায় কিরিচ দিয়ে কোপ দেওয়া হয়। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
আইনজীবী মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, গত ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মী এনামুল হক। দাঁড়ি-টুপি থাকায় সেদিন তার ওপর হামলা করা হয়। তার ডান হাতে ভেঙে গেছে এবং মাথায় কিরিচের কোপও রয়েছে। এ ঘটনায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আবেদনটি শুনানির জন্য রেখেছেন আদালত।
এর আগে, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় ২৯ নভেম্বর নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তার বাবা জামাল উদ্দিন। এতে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়। একইদিন কোতোয়ালি থানায় আরো একটি মামলা করেন আলিফের বড়ভাই খানে আলম। আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়।
এছাড়াও পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিনটি মামলা করে পুলিশ। সবশেষ ৩ ডিসেম্বর একই অভিযোগে সাবেক কাউন্সিলরসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪০ থেকে ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ী।
সব মিলিয়ে ২৬ নভেম্বর আদালত এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার কোনোটিতে বিবাদী করা হয়নি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ৪১ জন। তাদের মধ্যে হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১১ জন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর কোতোয়ালি থানার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপরই আদালত এলাকায় শুরু হয় তার অনুসারীদের তাণ্ডব। কারাগারে নেয়ার জন্য চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানটি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর এবং চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আলিফ লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ফারাঙ্গা এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ