বিএনএ, স্পোর্টস ডেস্ক : বৃষ্টি বিঘ্নিত ঢাকা টেস্টে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের কাছে লজ্জাজনকভাবে হারলো বাংলাদেশ। ঢাকার শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এ ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংস ও ৮ রানে হারলো এই জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিলো সফরকারী পাকিস্তান। সিরিজের প্রথম টেস্ট ৮ উইকেটে জিতেছিলো পাকিস্তান।
পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচের শেষ দিন আর মাত্র ৫.৩ ওভার বাকি থাকতে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০৫ রান। যেখানে ইনিংস হার এড়াতে বাংলাদেশের দরকার ছিলো আর মাত্র ৮ রান।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচের প্রথম দিন টস জিতে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে চতুর্থ দিন। ৩০০ রানের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংসদ্বয় গুটিয়ে গেছে ৮৭ ও ২০৫ রানে।
ফলো অনে পড়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেও ব্যর্থতার বৃত্তেই নিজেদের আটকে রাখেন বাংলাদেশের টপ-অর্ডার ব্যাটাররা। ২৫ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ২ ও অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা মাহমুদুল হাসান জয় ৬ রান করে ফিরেন। তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ৬ ও অধিনায়ক মোমিনুল হক ৭ রান করে ফিরেন। বাংলাদেশের পতন হওয়া এই চারটি উইকেট ভাগাভাগি করে নেন পাকিস্তানের দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হাসান আলি।
উপরের সারির ব্যাটারদের মত যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দেননি বাংলাদেশের দুই মিডল-অর্ডার মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। পাকিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলে অবিচ্ছিন্ন থেকেই মধ্যাহ্ন-বিরতিতে গিয়েছিলেন মুশফিক-লিটন।
বিরতি থেকে ফিরেও, উইকেটে দাপট দেখাচ্ছিলেন মুশফিক ও লিটন। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৫ রানে সাজিদের ঘুর্ণিতে হার মানেন লিটন। স্কয়ার লেগে ফাওয়াদকে ক্যাচ দেন প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা লিটন। ৮১ বলে ৭টি চারে ৪৫ রান করেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে ১৫০ বলে ৭৩ রান যোগ করেন তারা।
লিটনের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে পাকিস্তানের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মুশফিক। কিন্তু চা-বিরতি ঠিক আগ মুহূর্তে রান আউটের ফাঁদে পড়েন মুশি। ১৩৬ বলে ৩টি চারে ৪৮ রান করেন মুশফিক। ষষ্ঠ উইকেটে সাকিবের ৪৯ রানের জুটি গড়েন মুশফিক।
মুশফিক-লিটন, মুশফিক-সাকিবের জুটির কল্যাণে হার এড়ানোর পথ খুঁজে পেয়েছিলো বাংলাদেশ। উইকেট টিকে থাকার মত বড় জুটিই হার থেকে বাঁচাতে পারত বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে আরও একটি জুটি গড়েন সাকিব। উইকেট বাঁচানোই তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো তাদের। সেই পথেই ছিলেন তারা। কিন্তু ৭৬তম ওভারে বল হাতে হঠাৎ আক্রমনে এসে মিরাজকে লেগ বিফোর আউট করেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর। এজন্য রিভিউ নিতে হয়েছে পাকিস্তানকে। ১টি চারে ৭০ বলে ১৪ রান করেন মিরাজ। সাকিবের সাথে ১৩৯ বলে ৫১ রান তুলেছিলেন মিরাজ। এ ম্যাচে প্রথমবারের মত টেস্টে বল করতে এসেই উইকেট পান বাবর।
মিরাজ ফেরার ৯ বলের মাথায় প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন সাকিবও। সাজিদের বলে বোল্ড হন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ১৩০ বলে ৬৩ রান করেন সাকিব। ইনিংসে ৯টি চার মারেন তিনি।
২শ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে সাকিবের আউটের পর, পাকিস্তানের জয় সময়ের ব্যাপার ছিলো। তবে শেষ দিকের ব্যাটাররা লড়াই করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ৮৫তম ওভারে ২০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
খালেদ আহমেদের পর তাইজুলকে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট করে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন সাজিদ। এই ইনিংসে ৮৬ রানে ৪ উইকেট নেন সাজিদ। প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে ৮টিসহ ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হন সাজিদ।
তবে এদিন টেস্ট ক্যারিয়ারে আরও একটি মাইলফলক স্পর্শ করলেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। টেস্টে দ্রুত ৪ হাজার রান ও ২শ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়লেন সাকিব। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের পথে ব্যক্তিগত ৩৪ রান তুলে বড় ফরম্যাটে ৪ হাজার পূর্ণ করেন সাকিব। অবশ্য আগে থেকেই টেস্টে ২শর বেশি উইকেট ঝুলিতে ছিলো তার। প্রথম ইনিংসে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেছিলেন সাকিব। তার উপর নির্ভর করছিলো বাংলাদেশের ফলো অন। কিন্তু তার আউটের পর ৮৭ রানে গুটিয়ে ফলো অনে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৩০০ রান করেছিলো পাকিস্তান। টেস্ট ক্যারিয়ারের ৫৯তম ম্যাচে এসে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ৩০০/৪ ডি. (৯৮.৩ ওভার)
বাবর ৭৬, আজহার ৫৬, রিজওয়ান ৫৩*, ফাওয়াদ ৫০*, আবিদ ৩৯,
তাইজুল ২৫-৬-৭৩-২, খালেদ ১৭.৩-৫-৪৯-১, এবাদত ২৩-৩-৮৮-১
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৮৭/১০ (৩২ ওভার)
সাকিব ৩৩, শান্ত ৩০, লিটন ৬
সাজিদ ৪২/৮, শাহীন ৩/১
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ২০৫/১০ (৮৪.৪ ওভার)
সাকিব ৬৩, মুশফিক ৪৮, লিটন ৪৫, মিরাজ ১৪
সাজিদ ৮৬/৪, শাহীন ৩১/২, হাসান ৩৭/২
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।