20 C
আবহাওয়া
১২:০৭ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সাতকানিয়া উপজেলা ডাকঘরটি যেন এতিমের ঘর!

সাতকানিয়া উপজেলা ডাকঘরটি যেন এতিমের ঘর!

সাতকানিয়া উপজেলা ডাকঘরটি যেন এতিমের ঘর!

বিএনএ, সাতকানিয়া(চট্টগ্রাম) :  সাতকানিয়া উপজেলা ডাকঘরটি যেন এতিমের ঘর। চারিদিকে ঝোপঝাড়।মুছে গেছে সাইনবোর্ড, অকেজো নিরাপত্তা দেয়াল। মাথাব্যথা নেই কারো।

অপরিচিত কারো চিনে উঠার জো নেই— এটি একটি সরকারি ডাকঘর। নিত্য যাদের কাজকারবার কিংবা স্থানীয় লোকজনই শুধু বলতে পারবেন এটি সরকারি ডাকঘর। সাতকানিয়া উপজেলার প্রধান ডাকঘরের এমন হালহকিকত বছরের পর বছর ধরে। শুধু কি তাই! উপজেলা ও পৌরসদরের বুকজুড়ে প্রধান সড়কের পাশে দু-মুখী ৩৬ শতক ভূমিতে ‘বাণিজ্যিক ভবনের’ স্বপ্ন ঘোরে সবার। এদ্বার-ওদ্বার ঘুরে ছলেবলে কৌশলে জায়গাটি বাগাতে মরিয়া প্রভাবশালী সবকটি চক্র।

দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পের ‘ফাঁদে’ ফেলতে ‘খেলছিল’ প্রভাবশালী একটি চক্র। একসময়ের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থাকা ওই চক্রটির ‘খেলা’ শেষ হলেও একইপন্থায় মাততে ওঁৎ পেতে আছেন কেউ কেউ। অথচ বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই ডাকবিভাগের কারো।

সম্প্রতি ডাকঘর বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা পরিদর্শনে এলেও পোস্টমাস্টারের কক্ষে বসে চা খেয়ে তড়িঘড়ি করে চলে যান তাঁর এক ব্যাংকার বন্ধুর কাছে। আশেপাশে ঘুরে দেখাতো দূরের কথা, একটু উঁকিঝুঁকিও দেন নি।

গত বছর বিশ্ব ডাক দিবসের দিনে ‘ঝোপঝাড়ে ডাক বিভাগের অর্ধশত কোটি টাকার সম্পত্তি, বেহাতের শঙ্কা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাবেক ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেলের ‘চাপেচুপে’ অকেজো নিরাপত্তা দেয়ালের চারপাশে মাপঝোপ করলেও এখন পর্যন্ত ইট-সিমেন্টের গাঁথুনির কোন খবর নেই। এমনকি এনিয়ে দু’কলম লিখেনও নি ডাকবিভাগের অধ্বস্তন থেকে ঊর্ধ্বতন কেউ।

অথচ ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের খুব একটা আনাগোনা না থাকলেও মানি অর্ডার, সঞ্চয় স্কিম, সরকারি চিঠিপত্র, পার্সেলের জমজমাট ডাকঘর। প্রতি কার্যদিবসেই এসবের জন্য গ্রাহকের ভিড় লেগেই থাকে। এছাড়া ১৬টি উপ-ডাকঘরের কার্যক্রমও এটিকে ঘিরে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডাক ভবনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, পোস্টমাস্টার থেকে শুরু করে ডেপুটি পোস্টমাস্টার পর্যন্ত কারো এসব নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। যাদের চাহিদা তারা লেখালেখি-কান্নাকাটি না করলে কি ঢাকা থেকে গায়েবিভাবে ডাকঘরের রোগ সারাবে!

ডাক বিভাগ বলছে, সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গেট দিয়ে প্রবেশ করে মাথা উঁচাতেই দেখা গেল মুছে যাওয়া সাইনবোর্ড। দরজার দুপাশে সারি সারি রাখা মোটরসাইকেল। নতুন ভবনের কয়েক ফুট পাশে থাকা পুরনো ভবনের চারপাশজুড়ে ভরে গেছে ঝোপঝাড় আর আগাছায়। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় কবে লেগেছিল হাত তা সহজেই অনুমেয়। চারিদিকে নিরাপত্তা দেয়াল চার-পাঁচফুটেরও কম।

৩৬ শতক ভূমিতে ‘বাণিজ্যিক ভবনের’ স্বপ্নে ঘোরে অসাধু চক্র

জানা গেছে, সাতকানিয়া থানা রোডে উপজেলা ডাকঘরের নতুন ভবন নির্মাণের পর অযত্ন আর অবহেলায় পরিত্যক্ত হয় পুরনো ভবন ও তার আশপাশ। ফলে আশপাশে থাকা ৩৬ শতক জমিতে চোখ পড়ে স্থানীয় একটি ডেভলপার সিন্ডিকেটের। ওই সিন্ডিকেটটি স্থানীয় রাজনীতিবিদদের হাতে নিয়ে এসব সম্পত্তি কব্জা নিতে ডাকভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে দৌঁড়ঝাপ করে। তবে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের নজরে এলে তাদের স্বপ্ন ভেস্তে যায়। তাঁর নির্দেশে সার্ভে করে সীমানা প্রাচীরের প্রস্তাবনা যায় ঢাকায় ডাকভবনে। তবে সরকারের শেষমুহূর্ত হওয়ায় তা আর আগায়নি। পরে নতুন করে সরকার গঠনের পর ওই সিন্ডিকেটটি আবারো পুরনো তৎপরতা শুরু করে। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে তা আর বেশিদূর নিতে পারে নি ওই সিন্ডিকেটটি। তবে এখনো পুরনো কায়দায় নতুন কোন ‘চ্যানেল’ জায়গাটি গ্রাস করে নিতে পারে বলে শঙ্কা অনেকের।

সাতকানিয়া উপজেলা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার চন্দ্রনাথ আচার্য্য বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে যোগদান করেছি মাত্র। বেশ কিছু বিষয় আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। শিগগির মুছে যাওয়া সাইনবোর্ডটি সরিয়ে নতুন সাইনবোর্ড লাগানো ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নিচ্ছি। বাদ বাকি বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।’

একই বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল গোপাল নাথের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে এবং হোয়াটসঅ্যাপে বিস্তারিত লিখে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে চট্টগ্রামের পোস্টমাস্টার জেনারেল সালেহ আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাক বিভাগের সম্পতি দখলের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। আমরা ডিসেম্বর নাগাদ সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ পোস্ট অফিসের সংস্কার কাজে হাত দেব।’

সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে ডাকবিভাগের পরিচালক (পরিকল্পনা) আল মাহবুব বলেন, সাতকানিয়া উপজেলা পোস্ট অফিসহ বিভিন্ন পোস্ট অফিসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা তাগাদা দিচ্ছি, অতি শিগগির এটির অনুমোদন পাবো বলে আশা করছি। অনুমোদন পেলেই সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
এসএমএনকে, এসজিএন/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ