বিএনএ, আদালত প্রতিবেদক: অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারকে ২২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালত আসামি অবন্তিকা, শঙ্খ, সুকুমার ও অনিন্দিতার উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, যারা অবৈধভাবে বিদেশে দ্বিতীয় বাড়ি বানায় তারা দেশকে ভালোবাসে না। পারতপক্ষে আমাদের দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং অর্থ পাচারকারীদের রুখতে হবে। পি কে হালদারের মতো অর্থ পাচারকারীদের কোনো আদর্শ নেই। তারা কোনো আদর্শ ধারণ করে না। তারা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। দেশের স্বার্থে তাদের সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করতে হবে। দেশের বৃহৎ স্বার্থে পি কে হালদারের মতো লোকেরা কোনো ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়।
পর্যবেক্ষণে তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিনেও পাচারের অর্থ কানাডা থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। তাদের মতো উন্নত রাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া রাষ্ট্রের একার পক্ষে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব নয়। অর্থ পাচারের মতো অপরাধ আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর সহযোগিতা ও জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও উল্লেখ করেন, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার দিঘিরজান গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার। তার মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার পরিবর্তে সম্পদ গড়ার নেশায় মত্ত হন। আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার তার মা, আপন ভাইসহ ঘনিষ্ঠজনের সহযোগিতায় অসংখ্য নামিবেনামি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে পাহাড়সম অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, একজন মেধাবী নাগরিক তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন, অপরদিকে অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে তখন তিনি জাতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ান। আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষ ব্যক্তি স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের কাছে দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থ অনেক বড় ছিল। আমরা যেন নিজের সামান্য ব্যক্তি স্বার্থের জন্য মানিলন্ডারদের সহযোগী না হই।
আদালতের রায়ে পি কে হালদারকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় ১০ বছর এবং অর্থপাচারের দায়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তিন ধারার সাজা একটার পর একটা চলবে বিধায় পি কে হালদারকে ২২ বছর কারাভোগ করতে হবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছেন।
বিএনএনিউজ/ এসবি, এমএফ