বিএনএ ডেস্ক: ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী একমাত্র সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে সেতুটির একটি অংশ ধসে পড়েছে। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিন জন। এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।
শনিবার (৮ অক্টোবর) সকালে সেতুর গাড়ি চলাচলকারী লেনে একটি ট্রাকে এই বিস্ফোরণ ঘটে। বিবিসি জানায়, বিস্ফোরণে সেতুতে থাকা একটি তেলবাহী ট্রেনের সাতটি ট্যাংকারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণে ধসে পড়ে গাড়ি চলার দুটি লেনও। এরপর থেকে সেতুটিতে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সেতুর রেলওয়ে অংশ সন্ধ্যায় আবার খুলবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ওই সেতুর নাম ‘কার্চ ব্রিজ’।
রাশিয়ান তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, বিস্ফোরণের সময় কাছাকাছি একটি গাড়িতে ছিলেন নিহত হওয়া তিন ব্যক্তি। বিস্ফোরণের পর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সেতুতে আগুন জ্বলছে পাশাপাশি সেতুর কিছু অংশ পানির মধ্যে ঝুলে আছে। সেতুর ধ্বংস হওয়া অংশের একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াকও।
বিস্ফোরণের পর নড়েচড়ে বসেছে মস্কোও। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ঘটনাটি তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। তবে এই বিস্ফোরণের জন্য এখনো কিয়েভের ওপর দায় চাপায়নি মস্কো।
এদিকে সেতুতে বিস্ফোরণের পর ইউক্রেনের দিকে আঙুল তুলেছেন ক্রিমিয়ায় রাশিয়া নিযুক্ত এক কর্মকর্তা। খেরসনের রুশপন্থী এক কর্মকর্তা বলেছেন, সেতুটি মেরামত করতে দুই মাস সময় লাগতে পারে। আর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিস্ফোরণের পর কিয়েভের প্রতিক্রিয়া তাদের ‘সন্ত্রাসী চরিত্রই’ তুলে ধরেছে।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চলকে নিজেদের অংশ ঘোষণা করে রাশিয়া। পরে একটি গণভোটের মধ্য দিয়ে অঞ্চলটিকে রাশিয়ার সঙ্গে অঙ্গীভূত করা হয়। এরপর যোগাযোগের জন্য এই সেতু তৈরি করা হয়। ২০১৮ সালে সেতুটি উদ্বোধন করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সেনাদের কাছে সামরিক রসদ পাঠানোর ক্ষেত্রে এই সেতু ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্রিমিয়ার এই সেতুটি ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য একটি মূল লক্ষ্য বলে মনে করা হয়। এই সেতুটি ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে ১০০ মাইলেরও বেশি দূরে।
ক্রিমিয়া–রাশিয়া সংযোগ সেতুতে বিস্ফোরণে ইউক্রেনীয়দের উল্লাস
বিস্ফোরণে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের সেতুতে ধস হওয়ায় উল্লাসে মেতেছেন ইউক্রেনীয়রা। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহৎ মনোব্যাংক ইতিমধ্যে নতুন একটি ডেবিট কার্ড ইস্যু করেছে। কার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর ছবি দেয়া হয়েছে। টুইটারেরও ধসে পড়া সেতুর ছবি শেয়ার করছেন অনেকে
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা উল্লাস প্রকাশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব ওলেক্সি দানিলভও আছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ৭০তম জন্মদিনের মাত্র এক দিন পর এই বিস্ফোরণ ঘটল। টুইটার পোস্টে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর ভিডিওর পাশে মার্কিন অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর ১৯৬২ সালের বিখ্যাত পরিবেশনা ‘শুভ জন্মদিন মি. প্রেসিডেন্ট’ ভিডিওটিও জুড়ে দিয়েছেন ওলেক্সি দানিলভ।
গত এপ্রিলে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা ডুবির সঙ্গে সেতু বিস্ফোরণকে তুলনা করা হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সুসংবাদ পাচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা। দেশটির সেনারা রুশ বাহিনী দখলে নেয়া বিভিন্ন এলাকা পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছেন। এ অবস্থায় ধসে পড়া ও জ্বলন্ত কার্চ সেতু দেখে ইউক্রেনীয়দের মনোবল বাড়ছে। তাঁদের এই প্রতিক্রিয়াকে সন্ত্রাসী ভাবনার প্রতিফলন হিসেবে দেখছে রাশিয়া।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি সেতু ধসের ঘটনা নিয়ে ইউক্রেনীয়রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা করছেন। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেতু ধসের ঘটনাকে গত এপ্রিলে কৃষ্ণসাগরে রুশ যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা ডুবির সঙ্গে তুলনা করছে।’ তিনি আরও বলেছেন, সেতু ধসের ঘটনা নিয়ে কিয়েভের প্রতিক্রিয়া একধরনের সন্ত্রাসী আচরণ।
বিএনএ/এ আর