বিএনএ কক্সবাজার: সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। বুধবার ( ৮ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ দিনে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ বিচারক মোঃ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষ্য দেন ঘটনাস্থলের পাশে বাইতুল নুর জামে মসজিদের ইমাম মওলানা শহিদুল ইসলাম। এদিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে মামলার আসামিদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
এছাড়াও আরও দুই জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থিত রাখা হয়েছিল। এ পর্যন্ত ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আদালত শেষ হয় দুপুর ২ টা ২০ মিনিটে। আদালত পাড়া এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
আদালতে মওলানা শহীদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ চেকপোস্টে মেজর সিনহাকে তার গাড়ি থেকে নামতে বলেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের আইসি লিয়াকত। নামার সঙ্গে সঙ্গেই দুই রাউন্ড গুলি করেন। সে সময় সিনহা পড়ে যান এবং পানি পানি করে কাতরাতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে এসে আসামি লিয়াকত ও নন্দ দুলালের সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন ওসি প্রদীপ। পরে পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকা সিনহার পাঁজরে লাথি মেরে গালিগালাজ করেন। এরপর ওসি প্রদীপ মোবাইলে কারো সঙ্গে কথা বলেন, ‘লাশ ফেলে দিয়েছি এখন কি করবো?’ পরে একটি ময়লার গাড়িতে সিনহার মরদেহ ফেলে দেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় মেজর সিনহা সাহায্য চাইলেও পুলিশ সাহায্য করেনি বলে আদালতকে জানান তিনি। মসজিদের ছাদ থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে জানান ইমাম শহীদুল ইসলাম ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদ আলম জানান, মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পরবর্তী ২০, ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত। সে তিন দিনে বাকি সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
৫ সেপ্টেম্বর থেকে মেজর সিনহা হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দফার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণের ৩ দিনে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর আগে প্রথম দফা সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট। প্রথম দফা সাক্ষ্যগ্রহণের তিন দিনে নিহত মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিনহার সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর পরই তিনটি মামলা করে পুলিশ। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায় ও একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
বিএনএনিউজ/আরকেসি