বিএনএ, বিশ্ব ডেস্ক, ঢাকা, ৮সেপ্টেম্বর: আফগানিস্তান ও তালেবানের আজকের(৮সেপ্টেম্বর) সর্বশেষ খবর।
কাবুলে পাকিস্তান বিরোধী নারীদের বিক্ষোভ
আফগািনস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
সামরিক অভিযান ও গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে পাঞ্জশির উপত্যাকায় শত শত যোদ্ধাকে হত্যা করে প্রদেশটি দখলের ফলাফল ভাল হবে না বলে জানিয়েছে আফগানিস্তানের প্রবীণ রাজনীতিকরা। তারা বলেন, যেটি শান্তি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত, সেখানে যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে শত শত জোয়ানকে হত্যা-নিজের ভাইদের হত্যার সামিল। তাতে তালেবানের সাথে বিরোধ জিইয়ে থাকবে।
তালেবানরা পাঞ্জশির পুরোপুরি দখলের ঘোষণা দেয়ার পর দিন আফগানিস্তানের রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব মন্তব্য করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট, চেয়ারম্যান অফ দি হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিশন(এইচসিএনআর) আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ, হিজব ই ওয়াহদাত ই ইসলামি আফগানিস্তান দলের নেতা মুহাম্মদ মুহাকিক, আফগান গোয়েন্দা বাহিনীর সাবেক প্রধান রহমত উল্লাহ নাবিল।
তালেবানদের(সরকার) প্রধান নেতা কারা
ছবিতে তালেবান সরকারের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ হাসন আখুন্দ(মাঝে),উপপ্রধানমন্ত্রী মোল্লা আবদুল গনি বারাদার (ডানে) এবং মৌলভী আবদুল সালাম হানাফি(বামে)
আফগানিস্তানের বর্তমান তালেবান প্রধান কে ?
তালেবান আমীর হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা, যাকে শায়খুল হাদীসও বলা হয়( যিনি নবী করিম(স.) এর বাণী হাদিস সম্পর্কে অভিজ্ঞ)।১৯৯৬-২০০১ সালে যখন তালেবানরা প্রথম সরকার গঠন করে তখনকার আমীর মোল্লাহ মোহাম্মদ ওমর ছিলেন একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান ও কমান্ডার অব আফগান আর্মি বা তালেবান আর্মি।
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ব্যক্তিগতভাবে মোল্লাহ ওমরের খুব কাছের লোক ছিলেন। ওমর ২০১৩সালে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর অভিযানে আত্ম গোপনে থাকা অবস্থায় নিহত হন। মোল্লাহ ওমর নিহত হলে মোল্লাহ আখতার মনসুর তালেবানের নতুন আমীর এবং হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা উপ আমীর নিযুক্ত হন। ২০১৫সালের ২৯জুলাই পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ড্রোন হামলায় নিহত হন মোল্লাহ আখতার মনসুর। এর পরে শায়খুল হাদীস হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে তালেবানের আমীরের দায়িত্ব দেয় দলের কেন্দ্রীয় শূরা কমিটি।
তখন থেকে হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে খুব বেশি মানুষ প্রকাশ্যে দেখে নি।সাধারণ তালেবান সদস্যরাও তার সাক্ষাত পান না। একটি মাত্র ছবি ছাড়া নতুন আমীরের আর কোন ছবিও প্রকাশ করে নি তালেবান। শায়খুল হাদীস হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাই আফগানিস্তান তালেবানের মূল প্রধান ব্যক্তি।
তিনি নতুন অস্থায়ী কাবুল সরকারের প্রধান না হয়ে মোল্লা মুহাম্মদ হাসন আখুন্দকে(যিনি অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত) করার প্রস্তাব করেন।
তালেবান সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার একমাত্র ফটোতে, তিনি সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন – একটি সাদা পাগড়ি এবং লম্বা, ধূসর দাড়ির মধ্যে একটি অভিব্যক্তিহীন মুখ।
একজন কট্টরপন্থী আলেম, যার ছেলে আত্মঘাতী বোমারু ছিল, আখুন্দজাদা তার বেশিরভাগ নেতৃত্ব অপ্রকাশ্যে থেকে কাটিয়েছেন, অন্যদের আলোচনায় যোগ দিতে নেতৃত্ব দিতে দিয়েছিলেন।আখুন্দজাদার বয়স কত সে সম্পর্কেও সঠিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। সম্ভবত ৬০বছর হতে পারে।
তালেবান নেতাদের মতে, আখুন্দজাদা জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই। যাইহোক, তার ছেলে আব্দুর রহমান ২০১৭ সালের জুলাই হেলমান্দে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় মারা যান।
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা যেভাবে তালেবান প্রধান,সর্বোচ্চ নেতা
তালেবান নিয়ে গবেষণা করা কিছু বিশ্লেষক বলছেন, আখুন্দজাদা হলেন একজন পথপ্রদর্শক, আন্দোলনের মধ্যে বিভাজন নিরাময় এবং সামরিক বিজয়ের আগে আন্তর্জাতিক মিত্র ও শত্রুদের মোকাবেলা করা।অন্যরা অবশ্য বলছেন যে তিনি একজন ফিগারহেড, আন্দোলনের সময় আপোষ প্রার্থী হিসাবে পরামর্শ দেন।
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারে একটি কঠোর ধর্মীয় পরিবারে জন্ম নেওয়া, আখুন্দজাদা তালেবানের প্রাথমিক সদস্য ছিলেন- সোভিয়েত-আফগান গৃহযুদ্ধের সময় দক্ষিণ প্রদেশ হেলমান্দে প্রথম তালেবান আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।
আখুন্দজাদা ছিলেন আগের তালেবান সরকারের বিচার ব্যবস্থার প্রধান
জাতিসংঘের মতে, তালেবান যখন ১৯৯৬-২০০১ সালে আফগানিস্তান শাসন করে তখন আখন্দজাদা তার বিচার ব্যবস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।সে সময়কঠোর আইন দিয়ে নারীদের কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অবাধ্য ও যৌন অপরাধে নারীদের মাটিতে অর্ধেক পুতে পাথর মেরে হত্যার শাস্তি দেয়া হত।
যদিও আখুন্দজাদা বৃহৎ এবং শক্তিশালী নূরজাই গোত্রের লোক, শাসন ব্যবস্থার মধ্যে তালেবান নেতাদের মধ্যে বেশি পণ্ডিত হিসাবে দেখা হয়।
তালেবানের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের অনভিজ্ঞ পুত্র এবং সিরাজউদ্দিন হাক্কানির দলের সাথে তালেবানের জোট তৈরিতে আখুন্দজাদার ভূমিকা বেশি। রয়টার্স জানিয়েছে, আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি একটি অনলাইন অডিও বার্তায় আখন্দজাদার প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তালেবান প্রধান আখুন্দজাদার ছবি মাত্র একটিই
আখুন্দজাদার নেতৃত্বের প্রথম দিকে, আখুন্দজাদা এমন সংস্কার প্রতিষ্ঠা করেন যা বিভাজন এবং দলত্যাগের দ্বারা দুর্বল একটি বিদ্রোহের ওপর তার প্রভাবকে সুসংহত করে। কিন্তু তালেবানের শীর্ষ নেতা আখুন্দজাদার পাবলিক প্রোফাইল ছোট। একমাত্র ছবি রয়টার্স যাচাই করতে সক্ষম হয়েছে, যেটি একটি তালেবান টুইটার ফিডে ২০১৬ সালের মে মাসে পোস্ট করা।
এই শ্যাডো নেতার অস্তিত্ব তার অবস্থান এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে ক্রমাগত জল্পনা -কল্পনার জন্ম দিয়েছে। তালেবানরা তাদের নেতাদের ব্যাপারে তথ্য এতটাই গোপন রাখে যে, ২০১৩ সালে তালেবান আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের মৃত্যুর দুই বছর পরে তার পুত্র নিশ্চিত করেছিলেন।
গত মাসে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগের ২৫দিন পর ইসলামিক এমিরাটস অব আফগানিস্তানে তালেবান নতুন অস্থায়ী সরকার ঘোষণা করে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্নির্মাণ করব
এরপর তালেবানের প্রধান ও রহস্যময় নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা লিখিত এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা আমাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্নির্মাণ করব।আখুন্দজাদা বলেন, তালেবান তাদের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন সব আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ, যা এখন থেকে আফগানিস্তানের সমস্ত শাসন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে।
তালেবান কি সন্ত্রাসী
তালেবান সশস্ত্র যোদ্ধা ও তাদের সমমনা ইসলামিক দল নিয়ে সম্প্রতি আফগানিস্তান ও রাজধানী কাবুল দখল করেছে। তালেবানের অনেক নেতা জাতিসংঘ, মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর কালো তালিকাভুক্ত। অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৬-২০০১সালে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে ক্ষমতায় থাকাকালে নাইন ইলাভেন হামলার জন্য অভিযুক্ত আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল। আলকায়েদার সাথে তালেবানের ভাল সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে হামলার পরিকল্পনা করে আল কায়েদা। এই কারণে তালেবানকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহিৃত করে পশ্চিমা গোষ্টি।
বিএনএনিউজ24(bnanews24),এসজিএন