বিএনএ ডেস্ক: ঈদুল আজহায় সারা দেশে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত ২৯৯ জন ও আহত হয়েছেন ৫৪৪ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (৮ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের ঈদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষের কম যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৪ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভাল ছিল। ঈদের ছুটি ১দিন বাড়ানোর সুফল মিলেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে ঈদযাত্রায় মোট যাতায়াতের প্রায় ৮ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারির কারণে এবারের ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। কিছু কিছু সড়কের অবস্থা ভালো হওয়ায় এই সকল রুটে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা ১৫.১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩.১১ শতাংশ কমেছে। তবে পরিকল্পনার গলদে উত্তরাঞ্চলের পথে যানজটের ভোগান্তির পাশাপাশি কিছু কিছু রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হলেও কর্তৃপক্ষ বরাবরের মতো দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২২ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ৬ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ২৭৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ৫৪৪ জন আহত হয়েছেন। বিগত ২০২২ সালের ঈদুল আজহায় যাতায়াতের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৫.১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩.১১ শতাংশ, আহত ৪২.২৭ শতাংশ কমেছে। ওই সময়ে রেলপথে ২৫টি ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, আহত ১৫ জন ও০৬ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পশুবাহী যানবাহনের ব্যাপক চলাচল ও ঈদযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্রাক-পিকআপ-কভার্ডভ্যানের অবাধ চলাচলের কারণে এবারের ঈদে দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে ট্রাক-পিকআপ-কভার্ডভ্যান। এবারের ঈদে ৮৮টি ট্রাক-পিকআপ-কভার্ডভ্যান দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত, ১৯৩ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩১.৭৬ শতাংশ, নিহতের ৩১.১০ শতাংশ এবং আহতের ৩৫.৪৪ শতাংশ প্রায়। এর সাথে পাল্লা দিয়ে ৯১ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৪ জন নিহত ও ৭৭ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.৮৫ শতাংশ, মোট নিহতের ৩১.৪৩ শতাংশ, মোট আহতের ১৪.১৫ শতাংশ।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২২.৩৭ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩.০৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১৭.৫৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ১৫.৭৫ শতাংশ বাস, ১০.২৭ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৫.৪৭ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও ৪.৫৬ শতাংশ সিএনজি চালিত অটোরিকশা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৬.৪৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৯.২৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৯.৬০ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ১.৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে সংগঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যানসারের মতো বেড়ে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার মহামারি চলছে। দেশের হাসপাতালগুলোর চিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। অথচ জাতীয় নির্বাচন সামনে আসায় দেশের গণমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। নতুন সড়ক পরিবহন আইন হলেও সড়ক নিরাপত্তায় গবেষণা না থাকা, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার পদ্ধতিতে ক্রুটি থাকা, তদন্ত দুর্বলতা, আইনের দীর্ঘসূত্রিতাসহ নানা কারণে সড়ক নিরাপত্তা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলেও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল মিলছে না।