বিএনএ ডেস্ক: আরাফাতের ময়দানে পবিত্র হজের খুতবায় মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি মানবকল্যাণ ও বিশ্ববাসীর শান্তি কামনায় দোয়া করা হয়।
শুক্রবার (৮ জুলাই) শুক্রবার আরাফাতের ময়দানে পবিত্র হজের খুতবা পাঠ করেন সৌদির সাবেক বিচারমন্ত্রী ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের বর্তমান মহাসচিব শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইসা। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায়) মসজিদে নামিরায় সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে খুতবা শুরু করেন তিনি।
২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে আরবি ভাষায় খুতবা দেন ড. মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইসা। সেই খুতবা বাংলাসহ মোট ১৪ ভাষায় অনুবাদ করা হয়। সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিভিন্ন টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে।
খুতবায় মুসলিম উম্মাহ’র শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনার পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের ডাক দেয়া হয়। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে মহান রবের নিকট দোয়া করা হয়। ঈমান আকিদা অটুট রাখতে করণীয় সম্পর্কে খুতবায় তুলে ধরা হয়। পারস্পারিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষার তাগিদও দেয়া হয় হজের খুতবায়।
ড. মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইসা খুতবার শুরুতে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন। উপস্থিত হাজিদের সুস্থতা কামনার পাশাপাশি তাদের জন্য দোয়া করেন। খতিব বলেন, আল্লাহ ছাড়া মুসলমানদের আর কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক, তার কোনো অংশীদার নেই। মহান আল্লাহ তার সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক না করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য না চাইতে বলেন কারণ আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু।
খুতবায় বলা হয়, আল্লাহ মানুষকে একমাত্র তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি তাকওয়া অবলম্বন করতে বলেছেন। হযরত মুহাম্মদ (স.) কে শেষ নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন আর পরিত্র কোরআন অবতীর্ণ করে সকল আসমানি গ্রন্থের সত্যায়ন করেছেন।
খতিব বলেন, পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করার পাশাপাশি, ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে মহান আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, যে বান্দা নিজের ওপর জুলুম (পাপাচার) করে তার জন্য তওবার দরজা খোলা রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে পারে না।
শায়খ মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল কোরআনের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, হে মানব সম্প্রদায়, আল্লাহ তোমাদের ন্যায় ও ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলাম মানবজাতির জন্য এমন বিধান যেখানে সব শ্রেণির মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বলেন, ইনসাফ ও ন্যায়বিচার ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। মুসলিমদের আচার-ব্যবহারে সেই সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার আহ্বান জানান খতিব।
হজের খুতবার পর আরাফাতের ময়দানে জোহর ও আসরের নামাজ একসাথে আদায় করেন হাজীরা। আরাফাতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আল্লাহর মেহমানরা রওনা দেন মুজদালিফার উদ্দেশে। মাগরবি ও এশার নামাজ একাসাথে আদায়ের পর মধ্যে রাত পর্যন্ত অবস্থান করবেন সেখানে। ইবাদতের পাশাপাশি শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন মুসল্লিরা। মঙ্গলবার মিনায় ফিরে আল সামারায় পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজীরা। এরপর পশু কোরবানী করে মক্কায় ফিরবেন তারা। তাওয়াফ করবেন পবিত্র কাবা ঘর।
বৈশ্বিক মহামারির কারণে দুই বছর পর সীমিত পরিসরে ১২২ দেশের ১০ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছিলেন তারা। কণ্ঠে ছিল সেই আকুল ধ্বনি ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।
বিএনএ/ এ আর