বিএনএ, কক্সবাজার: চকরিয়ার ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে উটপাখির ছানা দেখতে প্রতিদিন ভীড করছেন দর্শনার্থীরা। উটপাখি আবার পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। উড়তে না পারলেও দ্রুতগতিতে দৌড়াতে পারা এই পাখির নাম উটপাখি। উটপাখির একটি ডিম প্রায় ২০টি মুরগির ডিমের সমান। বৃহৎদর্শন এ পাখি নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। গত সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গিয়ে দেখা গেল, উটপাখি দেখতে ভিড় করেছেন দর্শনার্থীরা।
কক্সবাজার শহর থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে চকরিয়ার ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। পার্কের উত্তর পাশেই তিন একর জায়গা নিয়ে উটপাখির বেষ্টনী। দর্শনার্থীরা সেখানে উটপাখির ছবি তুলছেন। কেউ হাঁকডাক দিয়ে উটপাখির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। মানুষ দেখলে মোটেও ভয় পায় না তারা; বরং বড়বড় চোখে তাকিয়ে থাকে। ডাক শুনে কখনো কখনো মাথা তুলে দাঁড়ায় চারটি উটপাখি। মাঝেমধ্যে ভেতরে খোলা মাঠে ছোটাছুটি করে। তবে সবার নজর উটপাখির সাত থেকে আট দিন বয়সী ছানাটির দিকে। এখনো ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে শেখেনি সে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, গত ৬ জানুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ১০টি ডিম পাড়ে উটপাখিগুলো। একেকটির ওজন প্রায় ১ কেজি ১০০ গ্রাম। এর মধ্যে তিনটি ডিম নষ্ট হয়েছে। গত ২৯ এপ্রিল একটি ডিম থেকে বাচ্চা হয়েছে। উটপাখির ডিমের খোসা পুরু ও চকচকে ক্রিম বর্ণের হয়ে থাকে। খোসার উপরিভাগে ছোট ছোট দাগ থাকে। স্ত্রী পাখি দিনে এবং পুরুষ উটপাখি রাতে ডিমে তা দেয়। ডিমগুলো বেষ্টনীতে থাকলে গুইসাপ, শিয়াল, বনকুকুর কিংবা অন্য প্রাণী খেয়ে ফেলতে পারে সন্দেহে ইনকিউবেটরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে সর্বোচ্চ ৫২ দিন সময় লাগে। সাত থেকে আট দিন বয়সী উটপাখির ছানাটির ওজন দেড় কেজির বেশি। প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যেও ছানাটি সুস্থ আছে। উটপাখির বাচ্চা সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে বলে জানান তিনি।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, দর্শনার্থীদের চাহিদা পূরণে ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে চারটি উটপাখি আনা হয়। পাখিগুলোর বয়স প্রায় ১০ বছর। চারটি উটপাখির উচ্চতা ছয় থেকে সাত ফুট। ওজন ১৫০ থেকে ১৭০ কেজি। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দামের কয়েক কেজি শাক, ঘাস, পোলট্রি ফিড ও ভুসি খাওয়াতে হয় উটপাখিদের।
উটপাখি প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে পারে। পানি ছাড়াই কয়েক দিন টিকে থাকতে পারে। ভয় কিংবা বিপদে পড়লে উটপাখি শুয়ে পড়ে অথবা দৌড়ে পালায়। আক্রমণ থেকে বাঁচতে লম্বা ও শক্তিশালী পা দিয়ে লাথি মারে। শক্ত ঠোঁট দিয়ে ঠোকরও মারে। দৈনিক গড়ে ১০/১২ হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন। দর্শনার্থীদের একটা বড় অংশ উটপাখি না দেখে তাদের ভ্রমণ শেষ করে না।
এই সাফারি পার্কে সব মিলিয়ে ১২৩ প্রজাতির ১ হাজার ৬৫টি প্রাণী আছে।
এত কিছু থাকতে লোকজনের দৃষ্টি উটপাখির দিকে কেন, তা জানতে চাইলে চকরিয়া সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসার গিয়াসউদ্দিন , সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য জাহিদুল ইসলাম লিটু বলেন, পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উটপাখি। ঘণ্টায় তারা নাকি ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে। সম্প্রতি ডিম ফুটে একটি বাচ্চাও হয়েছে। এ কারণেই উটপাখির ছানা দেখতে মানুষের আগ্রহ। এমনিতেই অনেক দূর দূরান্ত থেকে হাজারো নারী পুরুষ শিশু প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক দেখতে আসছেন।
ঢাকা ধানমন্ডি থেকে আসা লেখক সাংবাদিক তানভীর সোহেল বলেন, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য,অনন্য স্পট। আমি স্ব পরিবারে কক্সবাজার এসেই প্রথমে সিদ্ধান্ত নিলাম আগে সমুদ্র দেখবো, তারপর চলে যাব বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। পার্কে গিয়ে দেখি উট পাখীর ছানা। জীবনে এই প্রথম দেখলাম। আমার ৮ বছরের বাচ্চা আনাস তানভীর দেখে খুবই খুশী হলো। এ ছাড়া অন্যান্য পশুপাখি জীববৈচিত্র্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি।
বিএনএ/ এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, ওজি