বিএনএ ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আবারও বলেছেন, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচন ‘সম্ভব নয়’। গত বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো পুরোপুরি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি এবং এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।

তবে রয়টার্সে দেওয়া সাক্ষাৎকারের বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বছর নির্বাচন করা সম্ভব নয়—কথাটা তিনি রয়টার্সকে এভাবে বলেননি।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, এখন দেশে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ যে রকম নাজুক অবস্থায় আছে, এ রকম অবস্থায় নির্বাচন করাটা অনেক বেশি কঠিন হবে এবং এই পুলিশ প্রশাসনের একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতার পরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরে হয়নি। সেই জায়গা থেকে আমি বলেছি, আমাদের অবশ্যই নির্বাচনের আগে দেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সেটার জন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সামাজিক শক্তিকেও এগিয়ে এসে সহযোগিতা করতে হবে।’
শুক্রবার বিকেলে এএফপি নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। এএফপিকে তিনি বলেন, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে এখনো সমস্যার মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই নির্বাচন বিলম্বের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়। তবে এটা সত্যি নয়।’
গত বছরের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের সবচেয়ে পরিচিত মুখগুলোর একটি নাহিদ ইসলাম। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেন তিনি। গত সপ্তাহে সরকার থেকে পদত্যাগ করেন নাহিদ। এরপর তাঁর নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ হয় তরুণদের নতুন দল এনসিপির।
বাংলাদেশে সুদূরপ্রসারী সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহে ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এমনকি তরুণেরা যে কারণে জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেসব সংস্কারেও আগ্রহী নয় তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান এবং এর পরবর্তী সময়ে আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা বাস্তবায়নে আমাদের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
নাহিদ ইসলাম মনে করেন, তিনি ও তাঁর দলের নেতারা যদি আগামী সরকার গঠন করতে না-ও পারেন, তারপরও তাঁরা এমন একটি রাজনৈতিক শক্তির সূচনা করেছেন, যা আগামী কয়েক দশক ধরে প্রভাব বজায় রাখবে।
তিনি বলেন, ‘কেউই জানতেন না, একটি অভ্যুত্থান হবে। তবে এটি হয়েছে। আমি আন্তরিকতার সঙ্গে আশা করি এবং বিশ্বাস করি যে আমরা এবার বিজয়ী হতে চলেছি। তবে এই নির্বাচনই পৃথিবীর শেষ নয়…আমাদের লক্ষ্য হলো এই শক্তিটাকে আরও ৫০ বা ১০০ বা বেশি বছর টিকিয়ে রাখা।’
জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করেন—এমন সব মতাদর্শের মানুষের জন্য নিজেদের দলকে উন্মুক্ত রেখেছে এনসিপি। তবে গত মাসের প্রতিষ্ঠার পর দলের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় আলোচনার সৃষ্টি করেছে। দল গঠনের পর ডানপন্থীদের দাবির মুখে, এনসিপির কমিটি থেকে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা, একজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সবার অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বাস করি। তবে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক রীতিনীতির কারণে সুনির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’ এনসিপিতে এখনো প্রশংসা করার মতো বৈচিত্র্য রয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলে নারীদের সামনে এনেছি এবং সব বর্ণ ও ধর্মের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। সব নাগরিক যেন তাঁদের অধিকার ভোগ করতে পারেন, আমরা সে চেষ্টা করব।
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে এনসিপির। বিএনপির যুক্তি—জনগণের ম্যান্ডেটের একটি সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
নির্বাচন বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় নাহিদ ইসলাম যে বক্তব্য দেয়ার কথা, একইরূপ বক্তব্য জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হিসাবে দিতে দেখা যাচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক পদে সে কারণে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন নাহিদ ইসলাম কী এখনো উপদেষ্টা পদে বহাল আছেন?
নাহিদ ইসলাম দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বাচনের উপযুক্ত নয় বলে যে যুক্তিতে নির্বাচন পেছানোর কথা বলেছেন তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর দীর্ঘায়িত করার জন্যই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না? এমন প্রশ্নও রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সৈয়দ সাকিব