20.7 C
আবহাওয়া
৭:৫১ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ডোপ টেস্টের ভোগান্তির শেষ কোথায়?

ডোপ টেস্টের ভোগান্তির শেষ কোথায়?

ডোপ টেস্টের ভোগান্তির শেষ কোথায়?

বিএনএ, ঢাকা :  একটি বেসরকারি কোম্পানির কাভার্ডভ্যান চালানোর জন্য লাইসেন্স করবেন হাসেম মিয়া। ডোপ টেস্ট করাতে রাজধানীর আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে এসেছেন। এসেই যা দেখলেন তাতে তার চোখ ছানাবড়া! কাউন্টারের সামনে লিখে রাখা হয়েছে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১২০ জনের বেশি পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

হাসেম মিয়া বলেন, ‘আজকে সিরিয়াল পেলাম না। আগামীতে আসতে বলেছে, ওইদিন স্যাম্পল নেবে। তখন ফির টাকাও জমা নেবে। তখন যদি পিছে পড়ে যাই তাহলে আরেক দিন আসতে হবে। আবার আরেকদিন এসে টেস্টের সার্টিফিকেট নিতে হবে। বারবার আসা লাগবে। এতে আমাদের তো ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিন আমরা হাজিরাভিত্তিক টাকা পাই, আজকে হাসপাতালে আসায় কাজ করতে পারব না। এ রকম আরও দুদিন যদি আসা লাগে তা হলে তো ওই দুদিনও কাজ করতে পারব না।’

পেশাদার চালকদের হতে হবে মাদকমুক্ত। মাদকাসক্ত হলে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন না। এজন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নে ডোপ টেস্ট সনদ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। সনদ ছাড়া চালকরা নতুন লাইসেন্স ও পুরোনো লাইসেন্স নবায়ন করতে পারবেন না। এ টেস্টের মাধ্যমে যারা মাদকাসক্ত নন কেবল তারাই পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। তবে এই ডোপ টেস্টের শুরুতেই দেখা দিয়েছে ভোগান্তি। নমুনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে মাত্র ৬টি। এসব হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে চাহিদার তুলনায় কম নমুনা। এমন অবস্থায় অনেক চালক লাইসেন্স নবায়ন ও ইস্যুতে আগ্রহী হচ্ছেন না। চালকরা নির্ধারিত হাসপাতালে গিয়ে ডোপ টেস্ট করতে পড়ছেন বিপাকে।

লাইসেন্স নিতে আসা ভুক্তভোগীরা বলছেন, লাইসেন্স করতে এসে জানতে পারি ডোপ টেস্ট রিপোর্ট লাগবে। কিন্তু হাসপাতালে ৫০ জনের বেশি নতুন নমুনা সংগ্রহ করছে না। ফলে চার দিন ধরে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছি। কেউ নমুনা নিচ্ছেন না। আবার স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমোদিত অনেক হাসপাতালে এখনো নমুনা পরীক্ষাই চালু হয়নি।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. এহছানুল হক বলেন, আমাদের লোকবল সংকটে এখানে ডোপ টেস্টের পরিধি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এখানে শুধু ডোপ টেস্ট নয়। সকল ধরনের প্রায় ৪ শতাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালু আছে। লাইসেন্সের জন্য সরকারের এটি নতুন উদ্যোগ। সেজন্য প্রথমে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তবে দ্রুত এটি সমাধান হয়ে যাবে।

সড়ক সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দেশে সড়কে বিভিন্ন দুর্ঘটনার জন্য ৬৯ শতাংশ ক্ষেত্রে চালকের মাদকাসক্তি দায়ী। এই প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর ‘জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দিবস’ উপলক্ষে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃপক্ষকে চালকদের মাদক পরীক্ষার আওতায় আনার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা দেয়ার প্রায় দেড় বছর পর বিআরটিএ এটি বাস্তবায়ন শুরু করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদিত ডোপ টেস্টে মহানগরীর হাসপাতালগুলো হলো, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।

ঢাকায় একটি কোম্পানির গাড়ি চালান মো. আসাদুল হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন মাদক সেবন করে গাড়ি চালান। তাদের জন্য দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। এ অবস্থায় ডোপ টেস্ট করে প্রকৃত মাদকমুক্ত চালককে লাইসেন্স দেয়া উচিত। তাই এ পদ্ধতি চালু করায় সরকারকে সাধুবাদ জানাই।

এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি থেকে বিষয়টি কার্যকর করেছি। পেশাদার চালকদের জন্য ডোপ টেস্ট সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রিপোর্টে মাদক সেবনের আলামত পাওয়া গেলে লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন করা যাবে না।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, মাদকমুক্ত পেশাদার চালক পেতে ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নেয়া হয়। আমাদের সব সার্কেল অফিসে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের নির্ধারিত ফরম নিয়ে নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে ডোপ টেস্ট ছাড়া কেউ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে বা নবায়ন করতে পারবে না। হাসপাতালগুলোতে আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে যাচ্ছি।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ