বিএনএ, জামালপুর : জামালপুরের বকশীগঞ্জে ভোট কেন্দ্রে পুলিশের ওপর হামলা ও ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের গাড়ী ভাংচুর ও পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় নামীয় ৯২ জনসহ অজ্ঞাত ১৬শত জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার(৬ জানুয়ারী) বকশীগঞ্জ থানার এসআই আবু শরিফ বাদী হয়ে বকশীগঞ্জ থানায় ওই মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামী মেরুরচর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ার হোসেন হক।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার এসআই মামলার বাদী আবু শরীফ মামলায় উল্লেখ করেছেন, ৫জানুয়ারি বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের মেরুরচর হাসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন চলছিলো। এক পর্য়ায়ে মেরুরচর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ার হোসেন হকের নেতৃত্বে একদল উশৃংখল লোক কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করে। একই সময় হামলাকারীরা চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ার হোসেন হকের নির্দেশে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করার চেষ্টা করে। হামলাকারীরা পুলিশের ওয়াকিটকি ছিনতাই করে নেন। হামলাকারীরা পুলিশের একটি পিক-আপ ভ্যান( জামালপুর-ঠ-১১-০০২৩)গাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ পর্যায়ক্রমে মোট ১৬০টি বুলেট ও ৩২টি টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।
হামলায় বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) আব্দুর রহিম, মামলার বাদী এসআই আবু শরীফ, এসআই রাজু আহমেদ, এএসআই মজনু মিয়া, আশরাফুল মৃধা, কনেস্টেবল আতোয়ার রহমান, রঞ্জু শেখ, আব্দুল মজিদ, আব্দুল আলীম, শাহজাহান, শাহিন, সুজন মিয়া, আলাল উদ্দিন, রবিউল, আবু তাহের, রিফাত হোসেন, নায়েক মাজেদুল ইসলাম, আনসার পিসি সুমন মিয়া ও এপিসি আল মাহমুদসহ আইনশৃংখলা বাহিনির ১৯ জন সদস্য গুরুতর আহত হয়।
আহতদের মধ্যে গুরুত্বর আহত বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত)আব্দুর রহিম রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ার হোসেন হক কে হুকুমের আসামী করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলা নং-২।তারিখ ০৬/০১/২০২২। মামলার ধারা ১৪৩/১৮৬/৩৩২/৩৩৩/৩৩৭/৩৭৮/৩৫৩/৩৮৯/১১৪দ:বি: তৎসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(১)(ক)(৩)। মামলার বাদী বকশীগঞ্জ থানার এসআই আবু শরিফ। মামলায় ৭জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বকশীগঞ্জ থানার এসআই মো: আব্দুস সালাম।
অন্য দিকে পুলিশের ভয়ে লোকজন গবাদী পশুসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ । বর্তমানে মেরুরচর, ফকিরপাড়া, বাঘাডুবা ও ভাটি কলকীহারা গ্রাম শতভাগ পুরুষ শূন্য। মহিলাদের উপস্থিতিও খুবই নগন্য। অভিভাবকদের সাথে শিশু ও বৃদ্ধরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ৪ গ্রামের ১৫টি মসজিদের আজান বন্ধ রয়েছে। মসজিদে নামাজও বন্ধ। শুক্রবারের জুম্মার নামাজের সময় মসজিদ গুলো ছিলো ফাকাঁ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই। গ্রাম গুলোতে সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। গত ২৪ ঘন্টায় অসুস্থতা জনিত কারণে মেরুরচর গ্রামে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যাক্তিদের দাফন কাফনে কেউ শরীক হওয়ার সাহস পাননি। ফলে
বকশীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার ও পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মৃত ব্যাক্তিদের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত না থাকলে কোনো লোক হয়রানির শিকার হবে না।
বিএনএ/ এম শাহীন আল আমীন, ওজি