30 C
আবহাওয়া
৩:৫৭ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ধর্ষণ প্রতিরোধ : সরকারের সদিচ্ছা ও গণসচেতনতা জরুরি

ধর্ষণ প্রতিরোধ : সরকারের সদিচ্ছা ও গণসচেতনতা জরুরি


-মিজানুর রহমান মজুমদার

ধর্ষণ। এক নিষ্ঠুর সমাজ ব্যাধির নাম। এ রোগে আক্রান্ত মানুষগুলো নরপশু হিসেবে সমাজে  ধিকৃত। এ সব নরপশুর শিকার হয়ে অবেলায় ঝরে গেছে কত প্রাণ তার কী হিসেব কেউ রাখে ? যৌন হয়রাণি বা যৌন নির্যাতনের শেষ স্তর  ধর্ষণ। এ  ব্যাধি প্রাণঘাতী। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর রোগ সারানো সম্ভব নয়। যাকে ধর্ষণ করা হয় তাকে মূলত সামাজিকভাবে হত্যা করা হয়। তার দেহে প্রাণ থেকেও প্রাণহীন হওয়ার মতোই।

ধর্ষিতা যদি বেঁচেও যান, তিনি মানসিক বিপর্যস্ততা কাটিয়ে ওঠতে পারেন না। তিনি ট্রমায় ভোগেন।  আমাদের সমাজে ধর্ষণ একটি জঘণ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলেও ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে সহজে এ সমাজ গ্রহণ করতে পারে না। সে উদারতা এখনো আমরা অর্জন করতে পারিনি। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক গণপ্রতিরোধ কিংবা বিচারের কঠোরতা না থাকায় ধর্ষকও বিনাবিচারে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানোর দু:সাহস দেখায়। সে আবারো অপরাধ করার ধৃষ্টতা দেখায়। এভাবে আর কতদিন? প্রশ্ন ছিল জনমনে।

এখন দিন বদলেছে। স্বাধীন এ দেশ। মুক্তিযুদ্ধের শক্তির সরকার এখন ক্ষমতায়। এ দেশে ধর্ষণের মতো অপরাধ করে কেউ পার পাবে তা ভাবা মুশকিল। সাম্প্রতিক সময়ের মাদ্রাসা ছাত্রী  নুসরাত ও বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার বিচার কত দ্রুত হতে পারে তার প্রমাণ রেখেছে বর্তমান প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে সরকারকে সাধুবাদ জানাতে হয়।

দুর্নীতি ও ধর্ষণ অপরাধ দমনকে বেস্ট প্রায়োরিটি দিয়েছে বর্তমান সরকার। বর্তমান সময়ে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর সড়ক এলাকায়  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে সড়ক থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল ঢাবি সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মিছিল সমাবেশ করছে ঘটনার পরদিন থেকে।

সরকার বলেছে  ধর্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ধর্ষণকারিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জনগণও চায় যতো দ্রুত সম্ভব অপরাধী গ্রেপ্তার হোক। তার দৃষ্টান্তমূলক কঠিন সাজা হোক। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস যেন সত্য হয় ‘আমার ওপর আস্থা রাখুন’।

সমীক্ষা জানিয়েছে বিশ্বে ধর্ষণ অপরাধে বাংলাদেশের র‌্যাংকিং ৪০ নম্বরে। প্রতি এক লাখে ১০ জন ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকে। ২০১৯ সালে ধর্ষণ বেড়েছে দ্বিগুণ। বেড়েছে নারীর প্রতি সহিংসতাও ৷ কঠোর আইন, প্রচার প্রচারণা ও উচ্চ আদালতের নানা ধরনের নির্দেশনার পরও নারীর প্রতি সহিংসতা কমানো যাচ্ছে না ৷

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সলিশ কেন্দ্র (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২জন ৷ অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি৷

২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮১৮ জন নারী ৷ এদিকে ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে ৷ আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী৷নারীর প্রতি সহিংসতার অন্য চিত্রগুলোও ভয়াবহ ৷ ২০১৯ সালে যৌন হয়ানারীর শিকার হয়েছেন ২৫৮ জন নারী ৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ১৭০ জন৷ ২০১৯ যৌন হয়রানীর শিকার ১৮ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন৷

প্রতিবাদ করতে গিয়ে চারজন নারীসহ ১৭ জন হত্যার শিকার হয়েছেন৷ যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৪৪ পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ গত বছর যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৬৭ জন নারী ৷ তাদের মধ্যে নির্যাতনে নিহত হন ৯৬ জন এবং আত্মহত্যা করেন তিনজন ৷ আর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৪২৩ জন নারী ৷তাদের স্বামীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন ৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ১৭৩ জন ৷

Loading


শিরোনাম বিএনএ