৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দফায় দফায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজপথে মিছিল সমাবেশ করে। এমনকি হাইকোর্টে রিট করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
কিন্তু বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চাপে শেষ পর্যন্ত রিট প্রত্যাহার করে নেয় হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। এর আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করার দাবিতে বঙ্গবভন ঘেরাও করে। এতে সমর্থন দেয়নি বিএনপি, বরং সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে মন্তব্য করে এই ধরনের হটকারি সিদ্ধান্ত থেকে দূরে থাকার জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি কড়া বার্তা দেয়।
গত ৫ই নভেম্বর রাজধানীর সেগুন বাগিচায় রিপোর্টারস ইউনিটিতে ’মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সমন্বয়কদের সমালোচনা করে বলেছেন, বাবার আগে ছেলে হাঁটলে দেশ শেষ!
পরদিন ৬ই নভেম্বর তেতুলিয়ায় এর জবাব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
হাসনাত আব্দুল্লাহ’র এমন বক্তব্যে বুধবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও বিভিন্ন দেয়ালে ছাত্রদলের পোস্টার সাঁটানোর প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এই বিক্ষোভ থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
৭ নভেম্বর ‘ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ সামনে রেখে অন্যান্য এলাকার মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোসহ বিভিন্ন দেয়ালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার সাঁটায় ছাত্রদল। বিষয়টি নিয়ে বুধবার দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা হয়।
বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের ফটকে জড়ো হন একদল শিক্ষার্থী। সেখানে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। খবর পেয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ স ম আলী রেজা ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। এর এক পর্যায়ে আশপাশের হল থেকেও মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হন। শিক্ষার্থীদের মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে যায়। তার আগে ছাত্রদলের সাঁটানো পোস্টার ছিড়ে ফেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত ছাত্ররা।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘টু জিরো টু ফোর, ছাত্ররাজনীতি নো মোর’, ‘ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘দেয়ালে পোস্টার লাগালে, দুঃখ আছে কপালে’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ও অমর একুশে হলেও রাতে ছাত্রদলের পোস্টার সাঁটানোর প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন।
এ দিকে বুধবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল প্রশাসন বলেছে, সার্বিক সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য হলের অভ্যন্তরে বা হলচত্বরের দেয়ালে হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার লাগানো ও দেয়াললিখন করা যাবে না। কেউ এই আদেশ অমান্য করলে হল কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানোর ইস্যুকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরাসরি ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিলেও ওইসব সাধারণ ছাত্র বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থক। তাদের সঙ্গে আছে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সমর্থক ছাত্ররাও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি ও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থানের পেছনে সমন্বয়কদের রাজনৈতিক অভিলাষ ও ছাত্র শিবিরের ইন্দন রয়েছে। যার ফলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে বিভাজন তৈরি করেছে, যা আগামীতে আরও জোরদার হবে।
বিএনএ নিউজ,শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী