বিএনএ, ঢাকা : আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বৈধ হলেও তাদের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত আছে। তবে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখার অবস্থান যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক মেহেদি হাসানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ২৯শে সেপ্টেম্বর স্বাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হওয়ার পর দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। এনসিপি-জামায়াত ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিক্রিয়া দেখায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধই থাকছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই।
কিন্তু ভিতরে ভিতরে নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে সুযোগ দেওয়ার কূটনৈতিক তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
তারই ধরাবাহিকতায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে নর্ডিক তিনটি দেশের রাষ্ট্রদূত বৈঠক করেছেন। তারা হলেন—ঢাকায় নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলার।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে সাবের হোসেন চৌধুরীর নিজ বাসভবনে অতি গোপনীয়তায় এ বৈঠক হয়। দুপুর ৩টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অত্যন্ত গোপনীয়তায় চলে এ বৈঠক। আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে এ বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলার রাষ্ট্রদূত ফ্ল্যাগ ছাড়া অর্থাৎ কোনো কূটনৈতিক স্বাক্ষর ছাড়াই একই গাড়িতে চড়ে সাবের হোসেনের বাসভবনে প্রবেশ করেন। নজর এড়াতে তারা বৈঠক শেষে বাসভবনটি থেকে বেরিয়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে চলে যান। সচরাচর এমন গোপনীয়তা সাধারণ কূটনৈতিক সাক্ষাতের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় না।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব স্থান পেলেও নানামুখী রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে দেশে। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় দলটি তাদের প্রকাশ্য কার্যক্রমে আসতে পারছে না। এমন প্রেক্ষাপটের মধ্যেই সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের ঘটনা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১১ মে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো টালমাটাল। যতই দিন যাচ্ছে, ততই দেশের আইন শৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য না থাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় জাতিসংঘসহ অধিকাংশ পশ্চিমা দাতা দেশ মনে করে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে এবং দেশে গণতন্ত্র উত্তোরণ ব্যাহত হবে। অর্থাৎ ‘নো আওয়ামী লীগ, নো ইলেকশন!
বিএনএনিউজ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচ.এম।