25 C
আবহাওয়া
৫:১১ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারে আটক কিশোর গ্যাং গডফাদার টিনুই চসিকের কাউন্সিলর!

কারাগারে আটক কিশোর গ্যাং গডফাদার টিনুই চসিকের কাউন্সিলর!

কারাগারে আটক কিশোর গ্যাং গডফাদার টিনু

বিএনএ, চট্টগ্রাম : সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত কারাগারে আটক নূর মোস্তফা টিনু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) চকবাজার ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ৭৮৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বিজয়ী  ও অন্যান্য প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যানে বুঝা যায় নির্বাচন স্বত:স্ফূর্ত ছিলনা।

বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) চকবাজারের ১৫টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়। কাউন্সিলর সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু মারা যাওয়ায় এ ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চকবাজার ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৩২ হাজার ৪১ জন। পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ২১৬ জন এবং নারী ভোটার ১৫ হাজার ৮২৫ জন।

অভিযোগ রয়েছে, এলাকার স্কুল-কলেজের উঠতি কিশোর-তরুণদের নিয়ে কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছেন নূর মোস্তফা টিনু। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এক অনুসারীসহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় বিদেশি শটগানসহ ৬৭ রাউন্ড গুলি।

টিনু বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

নুর মোস্তফা টিনু। চকবাজারে কথিত যুবলীগ নেতা হিসেবে আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছেন দীর্ঘদিন থেকে।  রাজনৈতিক ছত্রছা্য়ায় বেড়ে ওঠা টিনুর বিরুদ্ধে রয়েছে এন্তার অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০১ সালে নগরীর গোলপাহাড় এলাকায় অত্যাধুনিক একে-২২ রাইফেলসহ নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন টিনু। এরপর জামিনে ছাড়া পেলেও যুবলীগ বা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কোন কর্মসূচিতে এ পর্যন্ত তাকে দেখা যায়নি।

কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী হওয়ার পর হঠাৎ করেই নগরীর পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানার আশেপাশে বিলবোর্ড ও ব্যানারে আবির্ভূত হন নুর মোস্তফা টিনু।

নগরির পাঁচলাইশ ও চকবাজার এলাকায় জমি দখল, ছিনতাই ও নিয়মিত চাঁদাবাজির করে বেড়াতেন তিনি। ২০১৫ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে নগরীর কাপাসগোলায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকার নগদ চেক এবং ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় টিনুর লোকজন। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষক এম এ হান্নানের আত্মীয় ওই ব্যবসায়ী।

এর একসপ্তাহ পর ওই বছর ৬ ডিসেম্বর বিকেলে চকবাজার পোস্ট অফিসের সামনে দুবাই প্রবাসী এক প্রকৌশলীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।

অভিযোগ রয়েছে, তারা সবাই নুর মোস্তফা টিনুর সহযোগী। সাধন চন্দ্র বসাক নামের ওই প্রবাসী বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে চকবাজার থানায় জানান। থানা পুলিশ মামলা না নিলেও রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেয়। ওই সমঝোতা অনুযায়ী প্রবাসী সাধন চন্দ্র বসাক সাত লাখ টাকা ফিরে পান।

২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর রাতে সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও ভোরের কাগজের ব্যুারো প্রধান স্বরুপ ভট্টাচার্যের ওপর হামলা চালায় টিনুর অনুসারীরা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার কায়সার হামিদ যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসী টিনু গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, নগরীর পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানার কিছু পুলিশ কর্মকর্তাও নিয়মিত টিনুর বাসায় আসা-যাওয়া করেন এবং তার কাছ থেকে মাসোয়ারা নিতেন ।

কলেজে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেয়ে চকবাজার এলাকা নিয়ন্ত্রণ ও তা ঘিরে আর্থিক লাভের বিষয়টি নিয়ে টিনু বেশী তৎপর ছিলো । ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজে সংঘর্ষের দুই সপ্তাহ পর গত ৩০ ডিসেম্বর চকবাজারে বিজয় দিবসের সমাবেশ করেন টিনু। ওই সমাবেশ উপলক্ষে চকবাজারের প্রত্যেকটি দোকান থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছে বলে একাধিক ব্যবসায়ী জানান। চাঁদার পরিমাণ সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে কয়েক হাজার টাকা। চকবাজার এলাকায় সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১১শ’ দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে যাদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। সর্বনিম্ন দৈনিক চাঁদা ৩০০ টাকা হলে ১১শ দোকানে তার ইনকাম দাঁড়ায় তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা ।

টিনুর বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা

টিনুর বিরুদ্ধে দেড়যুগে অর্ধ শতাধিক মামলা হয়েছে। অনেক মামলা বিচারাধীন। আবার অনেক ঘটনায় ভিকটিম কোনো অভিযোগই করেনি। তার উল্লেখযোগ্য মামলা গুলোর মধ্যে হচ্ছে- অস্ত্র আইনে ৪৪(৪)০৩ থানা-কোতোয়ালী, বিস্ফোরক আইনে ১৪(২)১২ থানা-পাঁচলাইশ, চাঁদাবাজি ধারায় ৩(৪)১৬ থানা-চকবাজার, হত্যা চেষ্টার ধারায় ৫(৮)১৬ থানা-চকবাজার, জেলা-চট্টগ্রাম। ২০০০ সালে টিনু নগরীর গোলপাহাড় এলাকায় একে-২২ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হন।

চট্টগ্রাম কলেজের প্যারেড মাঠ এলাকা থেকে শুরু করে চকবাজার , আশেপাশের বাকলিয়া কেবি আমান আলী রোডের ফুলতলা পর্যন্ত নিয়মিত হাসিল ও চাদাঁ আদায় করে টিনুর নিয়োগকৃত কর্মীরা । ফুটপাতে বসে জুতা পালিশ করা , কাপড় সেলাইকারী দর্জিকেও চাদাঁ ও হাসিল দিতে হয়। না হলে কাজ করতে দেয়া হয়না । চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে চকবাজার কাচাঁবাজার ইজারা নিয়েছেন টিনু। অন্য কেউ ইজারা নেয়ার সাহস দেখান নি।

ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার, মার্কেট, গার্মেন্টস, হকার ইত্যাদি দোকান থেকে প্রতিদিন লক্ষ টাকার চাঁদাবাজি করেছে টিনু। চন্দনপুরা-কাপাসগোলা, কলেজ রোড-কাতালগঞ্জ, বাদুরতলা-বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রতিদিন ক্যাশ টাকা ও মোবাইল ছিনতাই চক্রের প্রধান হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করেছে টিনু বাহিনী। ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে দখল-বেদখল বা যে কোনো ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা ছিল।

চকবাজার ও চট্টগ্রাম কলেজের আশেপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে তার বাহিনী কাজ করতো । তার বাহিনীর সদস্যরা হচ্ছে কায়সার হামিদ, সাদ্দাম হোসেন ইভান, শাহাদাত হোসেন ওরফে লেংড়া রিফাত, লম্বা নাসির, অভিক দাশ গুপ্ত, অনিন্দ্য বৈদ্য সানি, নাহিদুল ইসলাম জাবেদ, এলজি বিপ্লব, সৌরভ উদ্দিন ওরফে গুলি বাপ্পা, হামকা জুলকাস, বাইক জসিম, আমির হোসেন, কামরুল ইসলাম ওরফে ফর্সা রাজু, লেড়া মানিক, নিজাম উদ্দিন আহাদ। এদের প্রত্যেকে একাধিক ছিনতাই মামলার আসামী।

 

বিএনএ/ ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ