বিএনএ ডেস্ক, ঢাকা: জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কী? এমন প্রশ্ন মনে আসতেই পারে! জন্মের পর সরকারি খাতায় প্রথম নাম লেখানোই জন্ম নিবন্ধন। একটি শিশুর জন্ম নিজ দেশকে, বিশ্বকে আইনগতভাবে জানান দেয়ার একমাত্র পথ জন্মের পর জন্মনিবন্ধন করা। নবজাতকের একটি নাম ও একটি জাতীয়তা নিশ্চিত করতে এটি হচ্ছে প্রথম আইনগত ধাপ। জন্ম নিবন্ধন প্রতিটি শিশুসহ বয়স্কদেরও একটি অধিকার। এটি নাগরিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। জন্ম নিবন্ধনে একজন মানুষের নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, বাবা-মায়ের নাম, তাদের জাতীয়তা এবং স্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃক রেজিস্টারে লেখা বা কম্পিউটারে এন্ট্রি প্রদান এবং জন্ম সনদ প্রদান করা।
জন্মনিবন্ধন সনদ পাসপোর্ট ইস্যু, বিবাহ নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু, ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি, জমি রেজিস্ট্র্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স প্রাপ্তি, গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন), ঠিকাদারি লাইসেন্স প্রাপ্তি, বাড়ির নক্সা অনুমোদন, গাড়ির রেজিস্ট্র্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য কাজে লাগে।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন এর একটি তাৎপর্য আছে। জন্ম নিবন্ধন হলো একটা মানুষের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। রাষ্ট্র এইভাবে স্বীকার করছে যে, হ্যাঁ,তুমি শিশু রূপে এ রাষ্ট্রের একজন ভবিষ্যৎ নাগরিক হয়ে এসেছো। তোমাকে এ রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। তোমাকে স্বাগতম।
সুতরাং ভবিষ্যতে রাষ্ট্র থেকে যেকোনো সুযোগ-সুবিধা পেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও প্রতিষ্ঠিত মানুষ হওয়ার প্রয়োজনে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন রয়েছে। জন্ম নিবন্ধন না করালে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। মর্যাদা পাওয়া যায় না। সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। আইনগত সমস্যার সমাধান করা যায় না ইত্যাদি । এসব কারণে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম
ব্যক্তি যে এলাকায় বসবাস করেন যেমন- শিশুসহ বয়স্ক নাগরিক যারা এর আগে জন্ম নিবন্ধন করেনি তারা প্রথমে জন্ম নিবন্ধনের একটি ফরম সংগ্রহ করবেন। আপনি যদি গ্রামে বাস করেন তাহলে ফরম পাবেন ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের সেক্রেটারীর কাছে। আর শহরে বাস করলে পৌরসভার কমিশনার ও চেয়ারম্যান এর কাছে। সিটি কর্পোরেশন হলে বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিশনারের কাছে এবং সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত অফিস বা জন্মনিবন্ধন শাখায়ও ফরম পাওয়া যাবে।
ফরমটি ভালো করে পড়ে বুঝে তা পূরণ করতে হবে। প্রয়োজনে বুঝতে ও পূরন করতে অসুবিধা হলে যে অফিস থেকে ফরম নিচ্ছেন সে অফিসের কারো সহযোগিতা নিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন চেক
জন্ম তারিখের পক্ষে প্রমাণপত্র যেমন ইপিআই কার্ড, হাসপাতালের সনদ, পিএসসি, জেএসসি, এসএসসির সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি (মূল কপি দেখাতে হবে)। আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি। স্থায়ী ঠিকানার পক্ষে বাড়ির ট্যাক্স, বিদ্যুৎ বিল, দলিলের ফটোকপি এবং স্থায়ী ঠিকানা গ্রামে হলে নাগরিকত্ব সনদপত্র।
মৃত জন্ম নিবন্ধনে নিয়মাবলি
অনলাইনে মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য লাগবে জন্মনিবন্ধন সনদ, ডাক্তারের দেওয়া মৃত্যু সনদপত্র, কবরস্থানে দাফনকৃত রশিদ অথবা প্রমাণপত্র, স্থায়ী ঠিকানার পক্ষে বাড়ির ট্যাক্স বা বিদ্যুৎ বিল বা দলিলের ফটোকপি, দাফন গ্রামের বাড়ি হলে চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রমাণপত্র, ৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা, আবেদনকারী ও মৃত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং ছবি। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন ফরম সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জমা নেওয়া হয়।
জন্ম নিবন্ধন যাচাই ও অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কপি ডাউনলোড করার নিয়ম
অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরম
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড কপি ডাউনলোড করতে বা জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে প্রদত্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন তথ্য ব্যবস্থা বা Online BRIS ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করা যাবে।
জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে প্রথম খালি বক্সে যার জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই করতে চান, তার জন্ম নিবন্ধন সনদ এ থাকা ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার প্রদান করুন।
এরপর দ্বিতীয় বক্সে যার জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই করতে চান, তার জন্ম নিবন্ধন সনদ এ থাকা জন্ম তারিখ প্রদান করুন।
কারো জন্ম তারিখ যদি ১৯৯০ সালের জানুয়ারীর ১ তারিখ হয়, তবে দ্বিতীয় বক্সটিতে ১৯৯০-০১-০১ এভাবে লিখতে হবে।
দুইটি বক্সেই সঠিক তথ্য প্রদান করা হয়ে গেলে Verify বাটনে ক্লিক করুন।
Verify বাটনে ক্লিক করার পর যার জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে চান, তার জন্ম নিবন্ধনে থাকা তথ্যগুলো স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শিত তথ্যগুলো সঠিক কিনা তা যাচাই করে নিন।
যদি Verify বাটনে ক্লিক করার পর Matching Birth Records Not Found লেখা আসে, তবে বুঝবেন উল্লিখিত বক্সে দুইটিতে প্রদত্ত জন্ম নিবন্ধন নাম্বার বা জন্ম তারিখ – যেকোনো একটিতে ভুল হয়েছে।
উল্লেখিত পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করে থাকলে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী যার জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে চেয়েছিলেন, তার জন্ম নিবন্ধন এর তথ্য পেয়ে যাবেন। জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কিত তথ্যসমুহ স্ক্রিনে দেখার পর তা সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করা মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে দেখুন।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউন লোড
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউন লোড করতে এই লিংকে ক্লিক দিন : ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশের পর এরকম দেখতে একটি ওয়েবপেজ দেখতে পাবেন।
উল্লেখ্য, ৪৬ দিন থেক ৫ বছর বয়সীদের জন্ম নিবন্ধন নিতে টিকার কার্ড-স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যয়নপত্র স্বাক্ষর ও সিলসহ প্যাডে হতে হবে, পিতা-মাতার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নসহ বিদ্যালয়ের প্রত্যয়নের সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট লাগবে, বাসার হোল্ডিং নম্বর ও চৌকিদারি ট্যাক্স রশিদের হাল সনদ, আবেদনকারী-অভিভাবকের মোবাইল নম্বর, ফরমের সঙ্গে এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
আর বয়স ৫ বছরের বেশি হলে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (পিএসসি/জেএসসি/এসএসসি) শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র না থাকলে সরকারি হাসপাতালের এমবিবিএস ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সিলসহ প্রত্যয়ন সনদ এবং জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরমের ৭ এর ১নং কলামের স্বাক্ষর ও সিল বাধ্যতামূলক। যাদের জন্ম ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির পর তাদের ক্ষেত্রে পিতামাতার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক, যাদের জন্ম ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির আগে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক, যদি জন্ম ২০০১ সালের আগে হয় সেক্ষেত্রে পিতা-মাতা মৃত হলে মৃত্যুসনদ বাধ্যতামূলক।
যাদের জন্ম ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির পর তাদের পিতা-মাতা মৃত হলে প্রথমে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন গ্রহণ করার পর অনলাইন মৃত্যু নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করতে হবে। উভয় সনদ আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
বাসার হোল্ডিং নম্বর ও চৌকিদারি ট্যাক্সের রশিদের হাল সন, আবেদনকারী-অভিভাবকের মোবাইল নম্বর, ফরমের সঙ্গে এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি, আবেদনের সঙ্গে কাগজপত্র সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য-নারী সদস্যদের স্বাক্ষরসহ সিল বাধ্যতামূলক।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ