28 C
আবহাওয়া
১:৪৯ পূর্বাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আযমী চট্টগ্রামে ‘অবাঞ্ছিত’!

আযমী চট্টগ্রামে ‘অবাঞ্ছিত’!

আযমী চট্টগ্রামে ‘অবাঞ্ছিত’!

বিএনএ, চট্টগ্রাম: মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৮ জুন কুড়িগ্রামের রৌমারী ট্রেনিং ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের গাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’র সঙ্গীত ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র। যা পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পায়। এর আগে ’৬৯-এর উত্তাল গণ-অভ্যুত্থানের কাল পেরিয়ে ’৭০-এর নির্বাচন ও ’৭১-এ মুক্তিসংগ্রামের ব্রত নিয়ে সংগঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ’৭১-এর ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের ক্যান্টিনে জাতীয় সঙ্গীত সংক্রান্ত আলোচনায় সর্বসম্মতিক্রমে গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্ধারণের প্রস্তাব গ্রহণ করে।

জাতীয় নেতারা বিষয়টিতে সম্মতি দিলে ঢাকায় ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী জনসভায় এবং ৭ মার্চ রেসকোর্সের ঐতিহাসিক জনসভায় ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত তার কালজয়ী গানটি গাওয়া হয়।

YouTube player

১৯৭০ সালে বাঙালির প্রাণসঞ্জীবনী জহির রায়হান নির্মাণ করেন ‘জীবন থেকে নেয়া’। এই সিনেমায় ব্যবহৃত পাঁচটি গানের একটি ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। প্রকৃতপক্ষে তারও আগে থেকে একুশের প্রভাত ফেরির অন্যতম গান হয়ে উঠেছিল এটি। জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ পূর্ব বাংলার মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতীকায়িত করেছিল।

একাত্তরে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২৫ মার্চের কালরাত ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুজিবনগর সরকার গানটিকে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেয়। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীত বাজিয়ে। সেদিন থেকে গানটি বাঙালির একান্ত আপনার। তার আত্মপরিচয়ের মূলমন্ত্র। আত্মচেতনার হাতিয়ার। এক সাগররক্তের পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে পাওয়া ’৭২-এর সংবিধানে অন্তভুর্ক্তির মধ্য দিয়ে জাতীয় সংগীত পায় সুসংহত ভিত্তি।

কিন্তু গত ৫ আগষ্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কথিত আয়না ঘর থেকে বেরিয়ে আসা সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী সংবিধানের সঙ্গে জাতীয় সংগীতও পরিবর্তনের দাবি জানান। তিনি জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির গোলাম আজমের সন্তান। এরপর তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এর প্রতিবাদ করেছে। আশ্চর্যের হল দেশের প্রথম সারির দল বিএনপি এই বিষয়ে চুপ রয়েছে। চুপ রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার যুদ্ধে দেশবাসীর বিরোধিতা করায় গোলাম আজমের আজীবন কারাবাসের সাজা হয়েছিল। জেলে অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। একই অভিযোগ ছিল তাঁর পুত্র আযমীর বিরুদ্ধেও। আট বছর নিরুদ্দেশ থাকার পর সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছেন তিনি। তারপর সংবিধানের পাশাপাশি জাতীয় সঙ্গীতও বদলের দাবি তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয়। তাঁর গান কেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হবে। তাছাড়া ‘আমার সোনার বাংলা…. গানটি ইসলামিক ভাবধারায় রচিত নয়।

আশ্চর্যের বিষয় হল, বহু মানুষ জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দাবিতে গলা মিলিয়েছেন। বিরোধিতাও করছেন অনেকে। শুক্রবার একটি সংগঠন দেশ জুড়ে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় সঙ্গীত বদলের দাবি এবারই প্রথম নয়।। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খ. মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির পদে বসে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের কমিটি গঠন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. দ্বীন মুহাম্মদকে চেয়ারম্যান করে গঠিত ওই কমিটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল’, ফররুখ আহমেদের ‘পাঞ্জেরি’ কবিতাকে জাতীয় সঙ্গীত করতে প্রস্তাব দেয়। মোশতাকের সরকার পাল্টা ক্যু ও জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় সেসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি।

‘৭৯ সালের ৩০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’কে বাদ দিয়ে ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করতে প্রস্তাব করা হয়।

জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের তৃতীয় দফার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০০১-‘০৬ সালে, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। ২০০২ সালের ১৯ মার্চ তখনকার দুই মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনে যৌথ সুপারিশপত্র প্রধামন্ত্রীর কাছে জমা দেন। তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রস্তাবটি পরে আমলে নেননি।”

ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তনের দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও। বাহাত্তরের সংবিধান ‘বৈধ নয়’ মন্তব্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করারও দাবি জানান সেনাবাহিনীর সাবেক এ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।

জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সারা দেশে এক যোগে শুক্রবার বিকাল ৫টায় ‘সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’ কর্মসূচি পালন করেন। এতে শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক, সাধারণ শিক্ষার্থী ও দিনমজুর মানুষেরা জাতীয় সংগীত গেয়ে ওঠেন বুকে হাত রেখে। কারও চোখ ছিল ছলছল, আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন কেউ কেউ।

এদিকে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের বক্তব্যকে ‘উদ্ধত্য ও ধৃষ্টতা’ আখ্যা দিয়ে আমান আযমীকে চট্টগ্রামে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনএনিউজ/ শামীম আরা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ