বিএনএ,ঢাকা: বাংলাদেশের বন্দর সমূহে ধীরে ধীরে জাহাজ ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধির পাশাপাশি অধিক ড্রাফটের বড় জাহাজের (মাদার ভেসেল) বার্থিং সুবিধাও বাড়ছে। দেশের বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামে এতকাল জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের( গভীরতার) জাহাজ সরাসরি বন্দর জেটিতে বার্থিং(ভেড়ানোর) সুবিধা রয়েছে। সেখানে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলাস্থ মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে এখন যেকোনো সময়(জোয়ার ও ভাটা) ১০ মিটার ড্রাফটের( গভীরতার)জাহাজ ভেড়ানো সম্ভবপর।
এখানে উল্লেখ্য যে, ১ মিটার = ৩দশমিক ২৮ ফুট বা ৩৯.৩৭ ইঞ্চি। ড্রাফট হলো জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতা। বড় বড় মাদার ভেসেলগুলোর ড্রাফট বেশি হয়। এগুলোর পণ্য পরিবহন ক্ষমতাও বেশি।
২০১৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো যায়। মোংলা বন্দরে তা সাত থেকে সাড়ে সাত মিটার এবং পায়রাতে সাড়ে সাত মিটার ড্রাফট রয়েছে। আর চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন প্রকল্প মাতারবাড়ীতে তা ১০ মিটার, যেটি ধাপে ধাপে ১৪ মিটারে উন্নীত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। জানা যায়, সিঙ্গাপুর বন্দরের ড্রাফট সর্বোচ্চ ১৬ মিটার।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তেল খালাসের ১৮০ মিটার লম্বা জেটিটি নির্মাণ করা হয়েছিল গত বছর। এখন কয়লা খালাসের জন্য ৩০০ মিটার লম্বা জেটির ১৭৫ মিটারের কাজ শেষ হয়েছে। এটির বাকি নির্মাণকাজ এ বছর ডিসেম্বরে শেষ হবে।তাতে আগামী বছর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে কয়লাবাহী বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বন্দর সূত্র জানায়, গত সাত মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জামবাহী ১৯টি জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো হয়।
মাতারবাড়ীতে বন্দর সুবিধা বাড়লেও দেশের আমদানি–রপ্তানিকারকদের এই সুবিধা ভোগ করতে ৪-৫বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, মাতারবাড়ীতে কয়লা ও তেল খালাসের দুটি জেটিতে এখন শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সরঞ্জাম আনা হচ্ছে। আগামীতে আসবে কয়লাবাহী বড় জাহাজ।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে জাপানী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এটি হবে দেশের চতুর্থ বন্দর। তবে সব থেকে বেশি ড্রাফটের জাহাজের জন্য এটি সবসময় প্রাধান্য পাবে।
মাতারবাড়ী জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য ১৪ কিলোমিটার লম্বা নৌপথে সাড়ে ১৮ মিটার গড় গভীরতা (মিন সি লেবেল) তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এই গড় গভীরতার অর্থ হলো নৌপথে ভাটার সময়ও প্রায় ১৬ মিটার পানি থাকবে। তাতে এই নৌপথ ব্যবহার করে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে। তখন সুবিধা পাবে আমদানি–রপ্তানিবাণিজ্য। আর সড়ক সংযোগ চালু হলে ২০২৬ সাল থেকে পুরোদমে সুফল মিলবে এই টার্মিনালের।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছিল, মাতারবাড়ি বন্দরের প্রথম পর্যায়ের কার্যক্রম ২০২৬ সালে সম্পন্ন হবে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে মাতারবাড়ি বন্দরে সাড়ে ১৮ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে এবং প্রায় ৮ হাজার টিইইউ’স কন্টেইনার (বিশ ফুট দৈর্ঘ্যরে কন্টেইনার) নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে মাতারবাড়ি বন্দরে। ফলে সামগ্রিক পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে আনুমানিক ১৫ শতাংশ।
মাতারবাড়ি বন্দর সংযুক্ত হবে সড়ক, রেল ও নদীপথ দিয়ে । এই বন্দরকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণসহ একটি সুপরিকল্পিত যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে উঠছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে। যার ফলে যেকোন পণ্য সহজে এবং কম খরচেই পৌঁছে যাবে আমদানি-রপ্তানিকারকেদের দোরগোড়ায়।
বিএনএনিউজ২৪, এসজিএন