।। সৈয়দ সাকিব ।।
বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহেল আহমেদকে থানা থেকে প্রত্যাহার এবং তার বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতি তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইজিপি’স কমপ্লেইন সেলে আবেদন জানিয়েছে মোহাম্মদ ইদ্রিচ নামে এক বৃদ্ধ। পেশায় একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান মোহাম্মদ ইদ্রিচ আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরী গ্রামের মৃত ছিদ্দিক আহমেদের পুত্র। শনিবার (৪ এপ্রিল) পাঠানো অভিযোগ আশির দশকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস সহকারী ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ মোহাম্মদ ইদ্রিচ আইজিপি’স কমপ্লেইন সেলে পাঠানো অভিযোগ পত্রে বলেছেন, গত ৮ এপ্রিল বিকাল পৌনে ৫টার দিকে তার বাড়ির পাশে দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া থামাতে যান। এ সময় এক পক্ষে তাকে বেদম মারধর করে এক পর্যায়ে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করেন। তার আর্তচিৎকারে পুত্র আশরাফুল ইসলাম মুন্না এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে চোখে জখম করেন।
এই ব্যাপারে ঘটনার পর বিকাল সাড়ে ৫টায় একবার রাত সাড়ে ১১ টার আরেক দফা থানায় গিয়ে ওসি সোহেল আহমেদের কাছে অনুনয় বিননয় করেন। এ সময় ওসি অশালীন ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন। গালমন্দের এক পর্যায়ে বলেন “শালা বুড়া এত রাতে কেন থানায় এসে বিরক্ত করছিস্?’’ জবাবে, ভুক্তভোগী হামলার শিকার বৃদ্ধ মোহাম্মদ ইদ্রিচ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জানালে ওসি সোহেল “কিছুদিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আত্মগোপনে থাক’’ বলে তার কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
নিরুপায় হয়ে মাথায় গুরুতর জখম এবং বেদম মারধরের ফুলা আঘাতে অসুস্থ অবস্থায় আনুমানিক রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম শহরে এসে এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন ইদ্রিচ। পরদিন ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে সিআর মামলা নং ২০৬/২০২৪ দায়ের করেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট- ৬ এর সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হারুন মামলাটি আমলে নেন এবং আনোয়ারা থানার ওসিকে মামলাটি রের্কড করার নির্দেশ দেন।
এতে ওসি সোহেল আহমেদ ক্ষিপ্ত হন এবং আসামিদের থানায় ডেকে নেন। ঘটনার ৯ দিন পর মনোয়ারা বেগম (৪৫) নামে এক মহিলা বাদী করে একটি মামলা নেন ১৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় পাল্টা মামলা নেন। যা থানার নম্বর ১৭ (৪) ২০২৪।
সাজানো, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা থেকে ২৩ এপ্রিল মোহাম্মদ ইদ্রিচসহ মামলার সব আসামী চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পিপি, সিনিয়র অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুম চৌধুরী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দীন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট উম্মে সালমা চৌধুরীসহ একদল আইনজীবী বিজ্ঞ আদালতে আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদের অনিয়ম দূর্নীতি, তার অপেশাদার আচরণ এবং আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ঘটনার ৯দিন পর পাল্টা মামলাটি গ্রহণ করার দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করেন।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হারুন উপস্থাপনকৃত দলিলাদি ও যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে জামিন মঞ্জুর করেন।
বৃদ্ধ মোহাম্মদ ইদ্রিচ তার দুইপুত্রের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদের কারসাজিতে দায়ের করা মামলায় বাদী মনোয়ারা বেগম উল্লেখ করেছেন, তার পরনের শাড়ি খুলে ছিড়ে তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। অথচ থানায় দায়ের করা মামলায় যে ছবি যুক্ত করা হয়েছে তাতে মনোয়ারার পরনে রয়েছে মেক্সি। সেই মেক্সিটি বিভিন্ন স্থানে কাচি দিয়ে কাটা হয়েছে। টেনে ছেঁড়া হয়েছে তেমন চিহ্ন নেই। তাছাড়া গলার অংশে মেক্সটি অক্ষত। শুধুমাত্র জামিন অযোগ্য যৌন নিগ্রহের ফৌজদারী দন্ডবিধি ৩৫৪ ধারা যুক্ত করার জন্য এমন মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে মোহাম্মদ ইদ্রিচ অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, মামলার বাদী মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে তার জমি বা বসত ভিটা নিয়ে কোন বিরোধ নেই। দুইভাইয়ে মধ্যে ঝগড়া থামাতেই তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। পিতা-পুত্র এক সঙ্গে প্রকাশ্যে কোন নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে কীনা এমন প্রশ্নও করেন মিথ্যা মামলার শিকার মোহাম্মদ ইদ্রিচ।
আইজিপি’স কমপ্লেইন সেলে আবেদনে বৃদ্ধ মোহাম্মদ ইদ্রিচ অভিযোগ করেন মিথ্যা মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়েও তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারছেন না। কেননা প্রতিপক্ষ বলে বেড়াচ্ছে এবার ওসি সোহেল আহমেদকে দিয়ে তার তিনপুত্র আশরাফুল ইসলাম (মুন্না), সাইফুল ইসলাম (এমরান) ও আসিফুল ইসলাম (আকিব) এবং সাক্ষীদের ‘ইয়াবা’ মামলা দিয়ে সারা জীবন কারাগারে রাখবে।
বিএনএনিউজ/ বিএম/এইচমুন্নী